কবিতা 

মদসংখ্যা- খেও, কম কম মাঝে মাঝে ।। জিয়া হাশান

অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি বউ নাই। খুঁজে দেখি তার জামা-কাপড়, শাড়ি-গয়না সব হাওয়া। তার মানে নিজের সব কিছু নিয়া সে চলে গেছে? আমারে না জানায়ে পলায়নের পথ ধরেছে? রুমের টেবিল হাতড়াই, কাগজপত্র ঘাটি- কোনো চিরকুট ? না তার কোনো কিছুরই সন্ধান মেলে না।
আমাদের বিয়ে হয়েছে মাত্র কিছু দিন আগে। তার এখনো মাস পর হওয়া বাকি। হঠাৎ করে তড়িঘড়িতে গাঁটছড়া বাঁধতে হয়েছে। ফলে নতুন ফ্যামিলি বাসা নেবারও সুযোগ মেলেনি। তাই পুরানো ব্যাচেলার বাসাতেই বউ তুলেছি। সকালে তাতে তারে রেখে অফিসে গেছি। দুপুরে, সকালের শিফটের কাজ শেষ করে আড়াইটার দিকে বাসায় ফিরেছি। তালাবদ্ধ দেখে ডুপ্লিকেট চাবির সহায়তায় ভেতরে ঢুকেছি।
কিন্তু সকালে অফিসে যাবার সময় তার পলায়নের কোনো আলামত উঁকি মারেনি। এতটুকু লক্ষণও চোখে পড়েনি। বরং হাসি মুখেই সে বিদায়কে বরণ করে নিছে। এ ক’দিনে কোনো ঝগড়া-ঝাটি, মন কষাকষি? ইা, তার কোনো দেখা সাক্ষাতের কথা মনে পড়ে না। বরং প্রবাহমান নয়া দাম্পত্য-জীবন খড়-কুটো ছাড়াই বয়ে চলছে।
তাহলে তার পলায়ন কেন? তল্পী-তল্পা নিয়া হাওয়া হবার কারণ কী? এ ক’দিনের মধ্যেই আমার সাথে সংসার করতে তার অনীহার জন্ম নেয়া সারা? তার শাখা-প্রশাখায় বিস্তার লাভ করা সম্পন্ন ? তাই তার খপ্পড়ে পড়ে হাওয়া হয়েছে? একেবারে পালিয়ে গেছে ?
কিন্তু এ রকম আজিব অনীহার মাথা তোলা, চার দিকে তার হাত-পা ছড়ানো কেন ? তা জানার জন্যও অন্তত: তারে দরকার। তার মুখোমুখি হওয়া জরুরি। কিন্তু কোথায় তারে খুঁজি ? কোন জগতে হাতড়াই?
ঢাকা শহরে আছে তার এক মামার বাসা। সেখান থেকেই তারে তুলে আনা। আর আছে কিছু বন্ধু-বান্ধব। তাদের কে কোথায় আছে তার হদিস আমার অজানা। সুতরাং খুঁজতে নামলে প্রথমেই মামার বাসায় হাতড়াতে হয়। আকাশে বাতাসে হাত-পা ছড়ানো মোবাইল ফোন তখনো দেশজুড়ে পাখা বিস্তার করেনি। সুতরাং ল্যান্ডফোনই ভরসা। তাতে ভর দিয়া মামার বাসায় হাতড়াই। বাহ! এক হাতানিতেই সন্ধান মিলে যায়। মামী জানায়- হ্যা, তোমার বউ বাসায় হাজির আছে।
ব্যস, মগবাজার থেকে মোহাম্মদপুরে রিকসা ছুটাই। কিন্তু আমার সাক্ষাতে এসেই সে তোলেবেগুনে জ্বলে উঠে- তুমি একটা প্রতারক। আমার সাথে বিট্রে করেছো।
-ক্যানো, কীভাবে ?
-বিয়ার আগে বল নাই- তুমি মদ খাও। সারাক্ষণ মাতাল হয়ে পড়ে থাকো।
-বিয়েটা হুট করে হয়ে গেল। বলার আর সময় পেলাম কই।
-হ তোমার টেবিলে তিনটা দেরাজ। আইজ খুলে দেখি সবগুলো মদের বোতলে ভরা। খেয়ে খেয়ে রেখে দিছো।
-অনেকদিন হয়ে গেছে খালি বোতলগুলো ফালানো হয় নাই।
-পাশের বাসায় খোঁজ নিছি। তারাও বলেছে- তুমি সারাক্ষণ মদ খেয়ে চুর হয়ে থাকো। টাকা-পয়সা সব তাতে উড়াও।
-এখন তাহলে কী করবা ?
-আমি কোনো মাতালে সাথে সংসার করব না। ডিভোর্স নিয়া নেব।
অ্যা ! বলে কী ? এতো স্বাদের বিয়া দুদিনেই শেষ হয়ে যাবে ? মাস না ফিরতেই ডিভোর্সের মুখ দেখব? আমার মাথায় ভেঙে পড়া আকাশ ঠেকাতে দু হাত উপরে তুলি। প্রাণপণে বাঁচার চেষ্টা চালাই। কিন্তু তাতে চোখের সামনে সর্ষে ফুলের আনাগোনা শেষ হয় না। তাদের নর্তন-কুর্দন চলতেই থাকে। কেননা এতো ইজ্জতের প্রশ্ন। পৌরুষ নিয়া ধাঁধাঁর সূত্রপাত। তাই বউরে বোঝাই- দ্যাখো, আমি মাতাল হই না। যতই খাই মাতলামি করি না। পাড়া তো দূরের কথা এক রুমের বাসাটুকুও মাথায় তুলি না।
কিন্তু গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়ের অনুর্বর মস্তিষ্কজুড়ে কেবল মধ্যরাতে পাড়া মাতানো মাতালদের উৎপাত ঘুরে বেড়ায়। বাংলা ও হিন্দি সিনেমায় দেখা মদ খেয়ে জীবন শেষ করে দেয়া নায়কের করুণ পরিণতি উঁকিঝুঁকি মারে। ফলে তার পক্ষে আমার ছেদো কথায় কান দেয়া সম্ভব হয় না। সে তাই নিজের অবস্থানে দৃঢ় হয়ে থাকে। ডিভোর্স দিয়া আমার মাতাল জীবন থেকে দূরে সরে যাবার মনোভাব চার হাতপায়ে জাপটে ধরে রাখে।
শেষে তারে সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার প্রস্তাব দেই- তুমি একদিন দ্যাখো, আমি খেয়ে কী কী করি। কতটা আউলা-ঝাউল হই। কতখানি এলোমেলো পা ফেলি। তারপর না হয় তোমার ডিসিশন ফাইনাল কইরো। ডিভোর্স লেটার পাঠাইও।
এবারে যেন বউয়ের মন গলে। কেননা তার বাপ-দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠিতে কারো সুধারসে আসক্তির নজির নাই। তাই জীবনে কখনো কারো মদ খাওয়া দেখেনি। তা দেখার, একেবারে ছুঁয়ে ছেনে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ সে আর হাতছাড়া করতে চায় না। তাই সোৎসাহে সম্মত হয়- ঠিক আছে একদিন দ্যাখি। কীভাবে খাও। তারপর কী করো, কত দূর যাও। কোন কোন আসমান সায়ের করো। তবে মনে রেখো- যদি তুমি দুনিয়া ছাড়া হও। সাত তবকে পৌঁছো। আল্লাহর আসনে বইসা যাও। তাহলে ডিভোর্স লেটার রেডি থাকবে। সাথে সাথে তাতে সই করে চলে আসব। তখন তার কোনো ওজর-আপত্তি চলবে না।


তার কথায় ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালে তবেই তারে সাথে নিয়া বাসায় ফেরা পথ ধরা সম্ভব হয়। এমনকি পথে পথে পানের প্ল্যান পাকা করার সুযোগও হাতের মুঠোয় চলে আসে। তারে পুরোপুরি কাজে লাগাই। দুজনে মিলে আগামী সোমবার রাতরে চুজ করি। সে রাতে পানযজ্ঞের আসর বসাতে সম্মত হই।
কেননা মঙ্গলবার তখন আমার ডে অফ। মানে অফিসে সাপ্তাহিক ছুটি। সুতরাং সোমবার রাতে আয়োজন সেরে নিলে পরদিন সকালে অফিসে ছোটার ঝামেলা থাকবে না। বরং খাওয়ার পরের ঢেঁকুর তোলার মতো পানের পরের খোয়ারিটা তড়িয়ে তড়িয়ে উপভোগ করা যাবে। কেননা আর কার কাছে কেমন লাগে জানি না, তবে আমার কাছে পান তো জলের মতো তরল, মুখে তোলো আর গলায় চালান করো কিন্তু খোয়াড়িটা যেন স্বর্ণরেণুতে ভরপুর। জিহ্বার আগায় নিয়া তড়িয়ে তড়িয়ে উপভোগের বিষয়।
তখনো আমার কেরু কোম্পানির সাথে কারবার। তাদের গর্ভজাতের সাথে ঘরগৃহস্থালি। হাতের কাছে নিউ ইস্কাটন রোডে তাদের ঘাপটিমারা গুদাম। নানা সাইজের বোতল ধরে বিক্রির আস্তানা। আমরা বলি আবগারি দোকান। সামনের দিকটা তার হতদরিদ্র, কোলাপসিবল গেটের ভেতরে আসবাবপত্রবিহিন, কেবল গলা সমান উঁচু ডেস্কে সম্মৃদ্ধ রুমে। কিন্তু ভেতরে মালে মাল, একবার ঢোকার সুযোগ হয়েছিল, তখন দেখেছি, সেখানে রীতিমতো কার্টনের পাহাড়।
এখন যেখানে জনকন্ঠ ভবন মাথা তুলে খাড়া, ঠিক তার ডানপাশে ছিল ছদ্মবেশী আস্তানাটা। তবে এখন পাছা বদল করে দিলু রোডের মাথায় গিয়া আসন নিছে। কিন্তু যেখানেই তার আসন হোক না কেন তার হাঁটাচলা ওঠা বসা সব সরকারের আঙুলি হেলনে। তাই সন্ধ্যা লাগার আগেই, সাড়ে পাঁচটা বাজতে না বাজতেই তার মুখে আগল পড়ে। বন্ধ হয়ে যায়। তাই রাতবিরাতে যখনই খাই না কেন কেনাকাটাটা সন্ধ্যার আগেই সেরে ফেলতে হয়।
পরের সোমবার ঠিক তাই করি- মাঝারি সাইজের একটা বোতল, সুধারসের পরিভাষায় পাইট কিনে নিয়া আসি। বউও গরুর মাংস ভুনা করে। সুতরাং আমাদের প্রাইমারি প্রস্তুতি সন্ধ্যার আগেই সম্পন্নের মুখ দেখে নেয়।
তবে রাত দু’কদম আগালে, সে সময়কার আকাশ সংস্কৃতির একক অধিপতি- বিটিভির আটটার সংবাদে ইতি ঘটলে আমি টেবিল সাজাই। তার একপাশে বাদাম চানাচুরের সুঢোল বাটি আরেক পাশে পানি-বরফের ক্ষীণকটি ও ভারী নিতম্বের বৌল-বোতল অবস্থান নেয়।
তবে আমার এই সব আয়োজন ও পান কিছুই বউয়ের সরেজমিনে, গা-গতর টিপে টুপে পরখ করা হয় না। কেননা এক ও অদ্বিতীয় চ্যানেল- বিটিভির নাটক দেখার লোভে সে আগে থেকেই পাশের বাসার ড্রয়িংরুমে গিয়া আসন নেয়।

নাটকের পর্দা পড়ার সাথে সাথে ফিরে আসে। রুমে ঢুকেই তার বাতাস দখলকারীদের উদ্দেশ্যেবার কয়েক নাক কুচকায়- কী বিচ্ছিরি গন্ধরে বাবা।
ততক্ষণে আমার গোটা তিনেক আস্তো পেগ চালান করা সারা। তারা আমার শরীর জুড়ে শক্তির ভান্ডার খুলে বসে। ফলে সে বাঘের বলে বলিয়ান হয়ে উঠে। তার ক্ষুধ-পিপাসা কানায় কানায় পরিপুর্ণ হয়ে ওঠে। সুতরাং নাগালের ভেতওে, একেবারে হাতের মুঠোয় সুন্দরী সুঢোল শিকার পেয়ে সে আর থির থাকে কীভাবে? বরং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তোশক-বালিশে সমৃদ্ধ বিছানায় নিয়া তোলে। হরিণিশক্তিতে বউ নিয়মমাফিক দুএকবার গাঁইগুই করে বাধ সাধার প্রয়াস চালায় বটে তবে তা ধোপে টেকে না। বরং অচিরেই কাবু হয়ে আত্মসমর্পনের পথ ধরে। ফলে আমার শরীর রাত দুপুরে পা দেবার আগেই প্রথম দফা আহার সেরে নিতে সক্ষম হয়। ঠোঁট চেটেপুটে নিয়া পাশ ফিরতে পারে।
তবে দ্বিতীয় দফা শুরু হয় আরো অনেক পরে। রাত গভীরে পা দিলে। ভুনা গোস্ত দিয়া রাতের খাবার খেয়ে আরো দুচার পেগ পেটে চালান করার পর। সেবার অবশ্য কোনো তাড়াহুড়ার পথ ধরা হয় না। এক লহমায় সবটুকু মুখে পোড়ার প্রয়াস চলে না। আস্তে ধীরে আগায়। একটু একটু করে চোখে চোখে নেবার পথ ধরে। হাড়-মাংস চিবিয়ে মিহি করে তুলতে- চোষা-চাপা, পেশা-পোশার নানা ধরনের কসরত চালায়। ফলে বউ পুলকের চূড়া পানে পা বাড়ানোর সুযোগ পায়। উহ্ আহ্-এ কদম কদম পা ফেলে। ধাপে ধাপে উপরে ওঠে। শেষে একেবারে শৃঙ্গে চড়ে বিজয়ের আনন্দে চিৎকার জোড়ে। পুরো শরীর যেন ঢেঁকুরের আওয়াজ তোলে।
সম্ভবত: এটাই ছিল তার পুলকের চূড়া বিজয়ের প্রথম আনন্দ- আপাদমস্তক সমেত অর্গাজম। তাই সে বাদ ভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। শরীরের আনাচ-কানাচ যেন উদ্বাহু নৃত্য জুড়ে দেয়। শেষে আমারে জড়ায়ে ধরে ফিস ফিসায়- খেও, কম কম করে মাঝে মাঝে খেও।। হঠাৎ করে তড়িঘড়িতে গাঁটছড়া বাঁধতে হয়েছে। ফলে নতুন ফ্যামিলি বাসা নেবারও সুযোগ মেলেনি। তাই পুরানো ব্যাচেলার বাসাতেই বউ তুলেছি। সকালে তাতে তারে রেখে অফিসে গেছি। দুপুরে, সকালের শিফটের কাজ শেষ করে আড়াইটার দিকে বাসায় ফিরেছি। তালাবদ্ধ দেখে ডুপ্লিকেট চাবির সহায়তায় ভেতরে ঢুকেছি।
কিন্তু সকালে অফিসে যাবার সময় তার পলায়নের কোনো আলামত উঁকি মারেনি। এতটুকু লক্ষণও চোখে পড়েনি। বরং হাসি মুখেই সে বিদায়কে বরণ করে নিছে। এ ক’দিনে কোনো ঝগড়া-ঝাটি, মন কষাকষি? ইা, তার কোনো দেখা সাক্ষাতের কথা মনে পড়ে না। বরং প্রবাহমান নয়া দাম্পত্য-জীবন খড়-কুটো ছাড়াই বয়ে চলছে।
তাহলে তার পলায়ন কেন? তল্পী-তল্পা নিয়া হাওয়া হবার কারণ কী? এ ক’দিনের মধ্যেই আমার সাথে সংসার করতে তার অনীহার জন্ম নেয়া সারা? তার শাখা-প্রশাখায় বিস্তার লাভ করা সম্পন্ন ? তাই তার খপ্পড়ে পড়ে হাওয়া হয়েছে? একেবারে পালিয়ে গেছে ?
কিন্তু এ রকম আজিব অনীহার মাথা তোলা, চার দিকে তার হাত-পা ছড়ানো কেন ? তা জানার জন্যও অন্তত: তারে দরকার। তার মুখোমুখি হওয়া জরুরি। কিন্তু কোথায় তারে খুঁজি ? কোন জগতে হাতড়াই?
ঢাকা শহরে আছে তার এক মামার বাসা। সেখান থেকেই তারে তুলে আনা। আর আছে কিছু বন্ধু-বান্ধব। তাদের কে কোথায় আছে তার হদিস আমার অজানা। সুতরাং খুঁজতে নামলে প্রথমেই মামার বাসায় হাতড়াতে হয়। আকাশে বাতাসে হাত-পা ছড়ানো মোবাইল ফোন তখনো দেশজুড়ে পাখা বিস্তার করেনি। সুতরাং ল্যান্ডফোনই ভরসা। তাতে ভর দিয়া মামার বাসায় হাতড়াই। বাহ! এক হাতানিতেই সন্ধান মিলে যায়। মামী জানায়- হ্যা, তোমার বউ বাসায় হাজির আছে।
ব্যস, মগবাজার থেকে মোহাম্মদপুরে রিকসা ছুটাই। কিন্তু আমার সাক্ষাতে এসেই সে তোলেবেগুনে জ্বলে উঠে- তুমি একটা প্রতারক। আমার সাথে বিট্রে করেছো।
-ক্যানো, কীভাবে ?
-বিয়ার আগে বল নাই- তুমি মদ খাও। সারাক্ষণ মাতাল হয়ে পড়ে থাকো।
-বিয়েটা হুট করে হয়ে গেল। বলার আর সময় পেলাম কই।
-হ তোমার টেবিলে তিনটা দেরাজ। আইজ খুলে দেখি সবগুলো মদের বোতলে ভরা। খেয়ে খেয়ে রেখে দিছো।
-অনেকদিন হয়ে গেছে খালি বোতলগুলো ফালানো হয় নাই।
-পাশের বাসায় খোঁজ নিছি। তারাও বলেছে- তুমি সারাক্ষণ মদ খেয়ে চুর হয়ে থাকো। টাকা-পয়সা সব তাতে উড়াও।
-এখন তাহলে কী করবা ?
-আমি কোনো মাতালে সাথে সংসার করব না। ডিভোর্স নিয়া নেব।
অ্যা ! বলে কী ? এতো স্বাদের বিয়া দুদিনেই শেষ হয়ে যাবে ? মাস না ফিরতেই ডিভোর্সের মুখ দেখব? আমার মাথায় ভেঙে পড়া আকাশ ঠেকাতে দু হাত উপরে তুলি। প্রাণপণে বাঁচার চেষ্টা চালাই। কিন্তু তাতে চোখের সামনে সর্ষে ফুলের আনাগোনা শেষ হয় না। তাদের নর্তন-কুর্দন চলতেই থাকে। কেননা এতো ইজ্জতের প্রশ্ন। পৌরুষ নিয়া ধাঁধাঁর সূত্রপাত। তাই বউরে বোঝাই- দ্যাখো, আমি মাতাল হই না। যতই খাই মাতলামি করি না। পাড়া তো দূরের কথা এক রুমের বাসাটুকুও মাথায় তুলি না।
কিন্তু গ্রাম থেকে উঠে আসা মেয়ের অনুর্বর মস্তিষ্কজুড়ে কেবল মধ্যরাতে পাড়া মাতানো মাতালদের উৎপাত ঘুরে বেড়ায়। বাংলা ও হিন্দি সিনেমায় দেখা মদ খেয়ে জীবন শেষ করে দেয়া নায়কের করুণ পরিণতি উঁকিঝুঁকি মারে। ফলে তার পক্ষে আমার ছেদো কথায় কান দেয়া সম্ভব হয় না। সে তাই নিজের অবস্থানে দৃঢ় হয়ে থাকে। ডিভোর্স দিয়া আমার মাতাল জীবন থেকে দূরে সরে যাবার মনোভাব চার হাতপায়ে জাপটে ধরে রাখে।
শেষে তারে সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করার প্রস্তাব দেই- তুমি একদিন দ্যাখো, আমি খেয়ে কী কী করি। কতটা আউলা-ঝাউল হই। কতখানি এলোমেলো পা ফেলি। তারপর না হয় তোমার ডিসিশন ফাইনাল কইরো। ডিভোর্স লেটার পাঠাইও।
এবারে যেন বউয়ের মন গলে। কেননা তার বাপ-দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠিতে কারো সুধারসে আসক্তির নজির নাই। তাই জীবনে কখনো কারো মদ খাওয়া দেখেনি। তা দেখার, একেবারে ছুঁয়ে ছেনে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ সে আর হাতছাড়া করতে চায় না। তাই সোৎসাহে সম্মত হয়- ঠিক আছে একদিন দ্যাখি। কীভাবে খাও। তারপর কী করো, কত দূর যাও। কোন কোন আসমান সায়ের করো। তবে মনে রেখো- যদি তুমি দুনিয়া ছাড়া হও। সাত তবকে পৌঁছো। আল্লাহর আসনে বইসা যাও। তাহলে ডিভোর্স লেটার রেডি থাকবে। সাথে সাথে তাতে সই করে চলে আসব। তখন তার কোনো ওজর-আপত্তি চলবে না।
তার কথায় ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালে তবেই তারে সাথে নিয়া বাসায় ফেরা পথ ধরা সম্ভব হয়। এমনকি পথে পথে পানের প্ল্যান পাকা করার সুযোগও হাতের মুঠোয় চলে আসে। তারে পুরোপুরি কাজে লাগাই। দুজনে মিলে আগামী সোমবার রাতরে চুজ করি। সে রাতে পানযজ্ঞের আসর বসাতে সম্মত হই।
কেননা মঙ্গলবার তখন আমার ডে অফ। মানে অফিসে সাপ্তাহিক ছুটি। সুতরাং সোমবার রাতে আয়োজন সেরে নিলে পরদিন সকালে অফিসে ছোটার ঝামেলা থাকবে না। বরং খাওয়ার পরের ঢেঁকুর তোলার মতো পানের পরের খোয়ারিটা তড়িয়ে তড়িয়ে উপভোগ করা যাবে। কেননা আর কার কাছে কেমন লাগে জানি না, তবে আমার কাছে পান তো জলের মতো তরল, মুখে তোলো আর গলায় চালান করো কিন্তু খোয়াড়িটা যেন স্বর্ণরেণুতে ভরপুর। জিহ্বার আগায় নিয়া তড়িয়ে তড়িয়ে উপভোগের বিষয়।
তখনো আমার কেরু কোম্পানির সাথে কারবার। তাদের গর্ভজাতের সাথে ঘরগৃহস্থালি। হাতের কাছে নিউ ইস্কাটন রোডে তাদের ঘাপটিমারা গুদাম। নানা সাইজের বোতল ধরে বিক্রির আস্তানা। আমরা বলি আবগারি দোকান। সামনের দিকটা তার হতদরিদ্র, কোলাপসিবল গেটের ভেতরে আসবাবপত্রবিহিন, কেবল গলা সমান উঁচু ডেস্কে সম্মৃদ্ধ রুমে। কিন্তু ভেতরে মালে মাল, একবার ঢোকার সুযোগ হয়েছিল, তখন দেখেছি, সেখানে রীতিমতো কার্টনের পাহাড়।
এখন যেখানে জনকন্ঠ ভবন মাথা তুলে খাড়া, ঠিক তার ডানপাশে ছিল ছদ্মবেশী আস্তানাটা। তবে এখন পাছা বদল করে দিলু রোডের মাথায় গিয়া আসন নিছে। কিন্তু যেখানেই তার আসন হোক না কেন তার হাঁটাচলা ওঠা বসা সব সরকারের আঙুলি হেলনে। তাই সন্ধ্যা লাগার আগেই, সাড়ে পাঁচটা বাজতে না বাজতেই তার মুখে আগল পড়ে। বন্ধ হয়ে যায়। তাই রাতবিরাতে যখনই খাই না কেন কেনাকাটাটা সন্ধ্যার আগেই সেরে ফেলতে হয়।
পরের সোমবার ঠিক তাই করি- মাঝারি সাইজের একটা বোতল, সুধারসের পরিভাষায় পাইট কিনে নিয়া আসি। বউও গরুর মাংস ভুনা করে। সুতরাং আমাদের প্রাইমারি প্রস্তুতি সন্ধ্যার আগেই সম্পন্নের মুখ দেখে নেয়।
তবে রাত দু’কদম আগালে, সে সময়কার আকাশ সংস্কৃতির একক অধিপতি- বিটিভির আটটার সংবাদে ইতি ঘটলে আমি টেবিল সাজাই। তার একপাশে বাদাম চানাচুরের সুঢোল বাটি আরেক পাশে পানি-বরফের ক্ষীণকটি ও ভারী নিতম্বের বৌল-বোতল অবস্থান নেয়।
তবে আমার এই সব আয়োজন ও পান কিছুই বউয়ের সরেজমিনে, গা-গতর টিপে টুপে পরখ করা হয় না। কেননা এক ও অদ্বিতীয় চ্যানেল- বিটিভির নাটক দেখার লোভে সে আগে থেকেই পাশের বাসার ড্রয়িংরুমে গিয়া আসন নেয়।

নাটকের পর্দা পড়ার সাথে সাথে ফিরে আসে। রুমে ঢুকেই তার বাতাস দখলকারীদের উদ্দেশ্যেবার কয়েক নাক কুচকায়- কী বিচ্ছিরি গন্ধরে বাবা।
ততক্ষণে আমার গোটা তিনেক আস্তো পেগ চালান করা সারা। তারা আমার শরীর জুড়ে শক্তির ভান্ডার খুলে বসে। ফলে সে বাঘের বলে বলিয়ান হয়ে উঠে। তার ক্ষুধ-পিপাসা কানায় কানায় পরিপুর্ণ হয়ে ওঠে। সুতরাং নাগালের ভেতওে, একেবারে হাতের মুঠোয় সুন্দরী সুঢোল শিকার পেয়ে সে আর থির থাকে কীভাবে? বরং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তোশক-বালিশে সমৃদ্ধ বিছানায় নিয়া তোলে। হরিণিশক্তিতে বউ নিয়মমাফিক দুএকবার গাঁইগুই করে বাধ সাধার প্রয়াস চালায় বটে তবে তা ধোপে টেকে না। বরং অচিরেই কাবু হয়ে আত্মসমর্পনের পথ ধরে। ফলে আমার শরীর রাত দুপুরে পা দেবার আগেই প্রথম দফা আহার সেরে নিতে সক্ষম হয়। ঠোঁট চেটেপুটে নিয়া পাশ ফিরতে পারে।
তবে দ্বিতীয় দফা শুরু হয় আরো অনেক পরে। রাত গভীরে পা দিলে। ভুনা গোস্ত দিয়া রাতের খাবার খেয়ে আরো দুচার পেগ পেটে চালান করার পর। সেবার অবশ্য কোনো তাড়াহুড়ার পথ ধরা হয় না। এক লহমায় সবটুকু মুখে পোড়ার প্রয়াস চলে না। আস্তে ধীরে আগায়। একটু একটু করে চোখে চোখে নেবার পথ ধরে। হাড়-মাংস চিবিয়ে মিহি করে তুলতে- চোষা-চাপা, পেশা-পোশার নানা ধরনের কসরত চালায়। ফলে বউ পুলকের চূড়া পানে পা বাড়ানোর সুযোগ পায়। উহ্ আহ্-এ কদম কদম পা ফেলে। ধাপে ধাপে উপরে ওঠে। শেষে একেবারে শৃঙ্গে চড়ে বিজয়ের আনন্দে চিৎকার জোড়ে। পুরো শরীর যেন ঢেঁকুরের আওয়াজ তোলে।
সম্ভবত: এটাই ছিল তার পুলকের চূড়া বিজয়ের প্রথম আনন্দ- আপাদমস্তক সমেত অর্গাজম। তাই সে বাদ ভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। শরীরের আনাচ-কানাচ যেন উদ্বাহু নৃত্য জুড়ে দেয়। শেষে আমারে জড়ায়ে ধরে ফিস ফিসায়- খেও, কম কম করে মাঝে মাঝে খেও।

Related posts