আলাপচারিতা কবিতা গদ্য বিশ্বসাহিত্য 

জিম মরিসন এর “প্রস্তাবনা” এবং কয়েকটি কবিতা ।। ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ

আমি মনে করি সাক্ষাৎকার হলো শিল্পের নতুন একটি কাঠামো। আমি মনে করি আত্ম-সাক্ষাৎকার হলো সৃজনশীলতার নির্যাস। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করা আর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা। লেখক অব্যক্ত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।

 

এটা কাঠগড়ায় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো। এটা সেই অদ্ভুত ক্ষেত্র যেখানে তুমি চেষ্টা করো আর অতীতে ঘটে যাওয়া কিছুকে সেঁটে রাখো আর তুমি যা করার চেষ্টা করছিলে তা মনে রাখার জন্য একান্তভাবে চেষ্টা করো। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানসিক অনুশীলন। একটা সাক্ষাৎকার তোমাকে প্রায়শই তোমার মনের প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার সুযোগ করে দেয়— যা আসলে আমার কাছে শিল্পই। একটা সাক্ষাৎকার তোমাকে সেই সমস্ত শূন্যস্থান পূরণকারীদের বাদ দেওয়ার সুযোগ দেয়… তোমাকে সুস্পষ্ট ও নির্ভুল হওয়ার চেষ্টা করতে হবে… বিষয়ের সাথে… কোনো বাজে কথা নয়। স্বীকারোক্তি বাক্সে, বিতর্কে আর জেরায় সাক্ষাৎকার-কাঠামোর পূর্ববর্তী অবস্থা আছে। তুমি একবার কিছু বললে সত্যিই তা প্রত্যাহার করতে পারবে না। দেরি হয়ে গেছে অনেক। এটি খুব অস্তিত্বশীল একটি মুহূর্ত।

 

আমি শিল্প ও সাহিত্যের খেলায় আবদ্ধ— শিল্পী আর লেখকরা আমার হিরো।

 

আমি সবসময় লিখতে চেয়েছি কিন্তু আমি সবসময় মনে করতাম এটা ভালো হবে না যদিনা কোনোভাবে হাতটি কলমটি হাতে নেয় আর আমাকে ছাড়াই চলতে শুরু করে যেনো সত্যিই কিছু করার ছিলো। স্বয়ংক্রিয় লেখার মতো। কিন্তু এরকম কখনোই হয়নি।

 

আমি কিছু কবিতা লিখেছি- অবশ্যই। আমার মনে পড়ে পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘দ্যা পনি এক্সপ্রেস’ (টাট্টু ঘোড়া পরিবহন) নামে আমি একটি কবিতা লিখি। আমার মনে আছে— সেটা-ই আমার প্রথম লেখা। এটি ছিলো ব্যালড-ধরণের কবিতাগুলোর একটি। যদিও আমি একে আর একসাথে পেতে পারিনি। ‘হর্স ল্যাটিচিউট’ (ঘোড়া অক্ষাংশ) আমি যখন হাই স্কুলে ছিলাম তখন লিখি। আমি হাই স্কুল আর কলেজে প্রচুর নোটবুক রাখতাম। আর তারপরে আমি যখন স্কুল ছাড়ি— কিছু ভাষাহীন কারণে— হয়তো তা বুদ্ধিমানের কাজ ছিলো— আমি সেগুলো সব ফেলে দেই। রাতের পর রাত আমি সেই খাতাগুলোতে লিখতাম। খুব সম্ভবত যদি আমি সেগুলো ছুঁড়ে না ফেলতাম তবে কখনোই আমি আমার আসল লেখা লিখতে পারতাম না। কারণ সেগুলো মূলত এমন জিনিসের সঞ্চয় যা আমি পড়েছি বা শুনেছি— যেমন বইয়ের উদ্ধৃতি। আমি মনে করি যদি আমি তাদের কাছ থেকে মুক্তি না নিতাম তবে আমি কখনোই মুক্ত হতে পারতাম না।

 

শোনো— প্রকৃত কবিতা কিছুই বলে না— এটা কেবল টিক চিহ্ন দেয় সম্ভাবনার। খুলে দেয় সব দরজা। তুমি তোমার জন্য উপযুক্ত যেকোনো একটি পথে হাঁটতে পারো।

 

… আর সেজন্যই কবিতা আমাকে এতোটা আবেদন করে— কেননা তা খুব চিরন্তন। যতোক্ষণ মানুষ আছে— তারা শব্দ আর শব্দের সংমিশ্রণ মনে রাখতে পারে। কবিতা আর গান ছাড়া আর কিছুই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাঁচতে পারে না। কেউ পুরো উপন্যাস মনে রাখতে পারে না। কেউ একটি চলচ্চিত্র- একখণ্ড ভাস্কর্য- একটি চিত্রকর্ম বর্ণনা করতে পারে না। কিন্তু যতোক্ষণ মানুষ আছে— গান আর কবিতা বহাল থাকতে পারে।

 

আমার কবিতার লক্ষ্য যদি হয় কিছু অর্জন তবে তা হলো সীমিত উপায় থেকে মানুষকে উদ্ধার করা যা তারা দেখে আর অনুভব করে।

 

জিম মরিসন, লস এঞ্জেলস, ১৯৬৯-৭১

 


কবিতা

১৯৬৬ – ১৯৭১


 

ট্রাঙ্কের উন্মোচন

—অন্তরজগতের স্বাধীনতার মুহূর্ত

যখন উন্মুক্ত হয় মন আর

প্রকাশিত হয় অসীম মহাবিশ্ব

আর বিচরণ করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় আত্মা

শিক্ষক আর বন্ধুদের জন্য হতবুদ্ধ আর

বিভ্রান্ত অনুসন্ধান এখানে সেখানে সবখানে


 

স্বাধীনতার মুহূর্ত

যেভাবে কারাবন্দী

তার গর্ত থেকে

একটি তিলের মতো

জ্বলজ্বল করে রোদে

 

বাড়ি থেকে দূরে

একটি শিশুর ১ম ভ্রমণ

 

স্বাধীনতার সেই মুহূর্ত


 

লামেরিকা

আমাদের সম্রাজ্ঞীর ঠান্ডা চিকিৎসা

লামেরিকা

ক্ষণস্থায়ী মহাবিশ্ব

লামেরিকা

তাৎক্ষণিক আলাপন আর যোগাযোগ

লামেরিকা

কাঁচের মধ্যে পান্না

লামেরিকা

গোধূলির আলোয় আলোক-আধার

লামেরিকা

ফ্যাকাসে ভোরে পাথরের রাস্তা

লামেরিকা

নির্বাসনে ঢিলে পোশাক

লামেরিকা

গর্বিত এক হৃদয়ের দ্রুত স্পন্দন

লামেরিকা

বিশের মতো চোখ

লামেরিকা

ত্বরিত স্বপ্ন

লামেরিকা

জমাট হৃদয়

লামেরিকা

সৈন্যদের ডোম

লামেরিকা

মেঘ আর সংগ্রাম

লামেরিকা

নিশাচর পাখি

লামেরিকা

শুরু থেকে ধ্বংস

লামেরিকা

‘‘যেভাবে দেখা হয়েছিলো তার সাথে

লামেরিকা

একাকি আর জমাট

লামেরিকা

আর জঘন্য- হ্যাঁ

লামেরিকা

শুরু থেকেই সত্য”

লামেরিকা

তারপর থামো

যাও

বন্যতার মধ্যে

যাও চক্রাকারে করে আসো মার্চ


 

সে মঞ্চে প্রবেশ করলো:

রক্তের বুটজুতা— ঘাতকের ঝড়

বোকার স্বর্ণ— স্বর্গে ঈশ্বর

সে কোথায়?

তোমরা কি তাকে দেখেছো?

কেউ কি এই মেয়েটাকে দেখেছো?

স্ন্যাপ শট (অভিক্ষিপ্ত)

সে আমার বোন

লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান:

দয়া করে মনোযোগ সহকারে

এসব কথা আর ঘটনায় অংশগ্রহণ করুন

এটাই আপনাদের শেষ সুযোগ— আমাদের শেষ আশা

এই গর্ভ বা সমাধিতে আমরা

রাস্তার ভিড় থেকে মুক্ত

কালো জ্বর যার উন্মাদনা নিরাপদে

বেড়িয়ে আসে এসব দরজা

আমি এবং আমার বন্ধুরা এসেছি

সুদূর আরডেন থেকে নাচ আর

নতুন গান নিয়ে

সর্বত্র অনুগামীরা জড়ো হয়

আমাদের মিছিলে

রাজা দেবতা যোদ্ধা আর প্রেমিকদের গল্প

গহনার মতো ঝুলছে

তোমার উদাসীন আনন্দের জন্য

আমি আমিই!


 

তুমি কি তা খনন করতে পারো

আমার মাংস প্রকৃত

আমার হাত— যেভাবে তারা নড়ে

নমনীয় দৈত্যের মতো ভারসাম্যপূর্ণ

আমার চুল— ঝাঁকড়া আর বাবরি দোলানো

আমার মুখের ত্বক— চিমটি কাটে গালে

আমার জলন্ত তরবারি জিভ

ছিটিয়ে যায় কথার আগুন-মাছি

আমি বাস্তব

আমি মানুষ

কিন্তু আমি সাধারণ মানুষ না

না না না


 

তুমি এখানে কি করছো?

কি চাও তুমি?

গান?

আমরা গান বাজাতে পারি

কিন্তু তুমি চাও আরও

তুমি চাও এমন কিছু যা একেবারে নতুন

আমি কি ঠিক বলেছি?

অবশ্যই আমি ঠিক বলেছি

আমি জানি তুমি কি চাও

তুমি চাও উচ্ছ্বাস

স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা  

ব্যাপারগুলো যেমন মনে হয় ঠিক তেমন নয়

আমি তোমাকে নিয়ে যাই এই পথে— সে টানে সেই পথে

আমি কোনো কাল্পনিক মেয়ের গান গাইছি না

আমি তোমার কথা বলছি— আমার নিজের

চলো পৃথিবীকে তৈরি করি আবার

বোধের প্রাসাদ জ্বলছে

তাকাও— দেখো পুড়ে গেছে

উষ্ণ গরম কয়লায় আগুন পোহাও

বৃদ্ধর তুলনায় তুমি যুবক একজন

তোমাকে তা বলার নেই প্রয়োজন

ব্যাপারগুলো যেমন তুমি তেমন দেখতে চাও

তুমি আসলে জানো আমি কি করি

সব


 

আমি বিভ্রান্তিকর পথের পথপ্রদর্শক

 

বহুরূপী দুর্গের শাসক

লোহার কুয়াশার উপর

এই শীতল পাথরের আঙিনায়

নিজের ময়লায় ডুবে গেছি যে

নিজের শ্বাসই যে নেই নিঃশ্বাস


 

ক্ষমতা

আমি পৃথিবীকে থামিয়ে ফেলতে পারি

তার ট্র্যাকে— আমি নীল গাড়িগুলোকে

সরিয়ে ফেললাম দূরে

 

আমি আমাকে অদৃশ্য বা ছোটো বানাতে পারি

আমি বিশাল হয়ে উঠতে পারি আর দূরের

জিনিসগুলোয় পৌঁছাতে পারি

আমি পরিবর্তন করতে পারি প্রকৃতির গতিপথ

নিজেকে স্থাপন করতে পারি

স্থান বা সময়ের যেকোনো জায়গায়

ডেকে আনতে পারি মৃতদের

আমি অন্য জগতের ঘটনাগুলো

আমার গভীরতম অন্তরে

আর অন্যদের মনের মধ্যে

উপলব্ধি করতে পারি

 

আমি

 

আমি পারি


 

জীবনকে রূপ দিতে

মানুষের সংযোগ স্থাপনকারী প্রয়োজন

লেখক- নায়ক- তারকা- নেতা

একটি শিশুর বালির নৌকা

সূর্যের দিকে মুখ করা

ক্ষুদ্রাকৃতির নোংরা যুদ্ধে

প্লাস্টিকের সৈন্য

দুর্গ

গ্যারেজ রকেট জাহাজ

 

অনুষ্ঠান- থিয়েটার— নাচ

পুনরায় জাহির করতে

উপজাতীয় চাহিদা আর স্মৃতি

উপাসনার একটি আহবান

সর্বোপরি ঐক্যবদ্ধ হওয়া

পরিবারের জন্য একটি আকাঙ্ক্ষা

আর শৈশবের নিরাপত্তার জাদু


 

মহাসড়কটি

হলো

প্রেমিক-প্রেমিকা

অন্বেষক

বিদায়ীদের

দ্বারা

জনাকীর্ণ

খুব

আগ্রহী

অনুগ্রহ

দেখাতে

ভুলে

যেতে

বন্যতা


 

এক লোক তার উঠানের স্তূপে

পাতা কুড়ায়

একটি গাদা

আর সে হেলান দেয় তার স্তূপের উপর

আর সেগুলোকে পুড়িয়ে দেয় সম্পূর্ণরূপে

সুগন্ধে ভরে যায় বন

শিশুরা থমকে যায় আর মনোযোগ দেয় গন্ধে

কয়েক বছরের মধ্যে যা পরিণত হবে স্মৃতিবেদনায়


 

সাইরেন

জল

বৃষ্টি ও বজ্রপাত

তলদেশ থেকে অগ্নিশিখার ফোয়ারা

গরমে ঝলসানো পোকা

কাঁদে ব্যাঙ আর ঝিঁঝিপোকা

দরজা খুলে যায় আর বন্ধ হয়

কাঁচভাঙা

শান্ত কুচকাওয়াজ

একটি দুর্ঘটনা

সিল্ক আর নাইলনের মর্মর শব্দ

শুকনো ঘাসে জল দেয়া

আগুন

ঘণ্টা

ঠকঠকি সাপ হুইসল করতাল

নল কাটার যন্ত্র

ভালো রসিক মানুষ

স্কেইট ও মাল-গাড়ি

মটর সাইকেল


 

কোথা থেকে তুমি শয়তানকে

জেনেছো? —বইয়ের বাইরে

আর প্রেম? —বাক্সের বাইরে


 

পাপের রাত (পতন)

১ম সেক্স— পাওয়ার অনুভূতি

ইতোমধ্যে এই একই কাজ করা হয়েছে যথাসময়ে

আরে না— আবার না


 

তথ্যসূত্র :

WILDERNESS

THE LOST WRITINGS OF JIM MORRISON

VOLUME 1

VINTAGE BOOK

NEW YORK

Related posts