কবিতা 

রাশা নোয়েলের পাঁচটি কবিতা

১.

সামাজিক মেলামেশা এইঃ সর্বৈব
মানুষকে নিয়ে কবিতা লেখা হয়ে গেছে
অসংখ্য, অগুনতি কবি। রাফ বৈচিত্র্যময়,
কলমের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভে
কবিতার সুচতুর দাবাড়ু হবার আগে
একজন কবি-র শব্দের পর শব্দের গ্রুনফেল্ড ডিফেন্স
বিস্মিত করে নিতান্ত পৃথিবীকে৷ চৌষট্টি ঘর সাজিয়ে
পরখ করে দেখা যেতে পারে তার মানবীয় নমুনা৷
এদের মধ্যে প্রকৃতি ব্যতীত আর কোনো ব্যতিক্রমী কিছু চিন্তার সন্নিবেশ নেই।
একজন মানুষ নেক থাকতে থাকতে শয়তান হয়ে উঠতে পারে
একজন কবি শয়তান বেল্লিক থেকে
দ্রুত হয়ে যায় কবিতার সুচতুর দাবাড়ু।
এই আমূল পরিবর্তন শোভা বর্ধন করে প্রকৃতির।
শেষতক সামাজিক মেলামেশার অভ্যাসটা আমৃত্যু সরব করে রাখে মস্তিষ্কের আয়োজন।

 

২.

মানুষের ছায়ার ওপর মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে
ফলতঃ চিন্তাসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র থেকে বেরোবার
এইরূপ অভিনব কৌশল এড়িয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য৷

জড় বস্তুসমূহের উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে
নামকরণ করা যায় সহজেই
মানুষের উজ্জ্বলতাও চোখে পড়ে
যার যার মেধার সাপেক্ষে মূল্যায়ন হতে দেখে ভাবি- করোটির জোরে শিশুরা
কখনোই হাঁটতে শুরু করে না৷
মূলত, ওটা পা; যা তাকে এবং তাদেরকে করে
রাস্তার নিকটতম ।

এ কবিতাও নিকটে চ’লে আসে, নিজেকে বিকটদর্শন রাস্তা মনে করে
বিভিন্ন কবিদের ব্যবহার করা শব্দের সম্ভার সাজিয়ে বসে
পাখিদের কল্লোল দেখে মনে করি আদতে ওরা এ কবিতাকেই ভালোবাসে
ভালোবাসে আর তদানীন্তন সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করতে করতে
উড়ে যায়, পৃথিবীর বৃহৎ পুষ্করিণীর দিকে
সেখানেও থাকে থির চোখের নীলাভ মীন

জলের স্বার্থে নিজ করপুটে বেঁচে থাকা মানে
জুপ্লাংকটন হয়ে নিজ নিজ নীড়ের চারিপাশে বিচরণ, বিলীন
নদীনালা বনজঙ্গল চাষবাস করা বাদে
মানুষের ব্যস্ত অবসর কাটাবার ইতিহাস লুকায়িত
খুনে, হত্যায়, রক্তে- সত্যায়িত ইতিহাসের উঠতি বদমাশ

বেড়ালটা কোথা যায়, আসে- বারবার ভাবি
লেজের চিবুক জুড়ে রোয়া রোয়া মুখোশের নাভি
গুরুতর সময় চ’লে- শিরোনামে অভ্যস্ত সময়
আমাদের মানুষ ও আমরা মানুষেরা কথা কয়

কয়েকটি নিরক্ষর স্মৃতির উদ্দেশ্যে, প্রকারভেদ তৈরি করে দিয়ে পালিয়েছে শয়তান বেল্লিক ইঁদুর।

ইঁদারার অদূরে তাদের চুবিয়ে মারা হোক

রাষ্ট্রের নতুন উৎসব- তিনদিনব্যাপী শোক

কবিতার নতুন সংবিধানে মুখ ধোয়া শ্রেয়তর নয়
আমাদের মানুষ ও আমরা মানুষেরা কথা কয়
নিরীহ জমিন ও উন্মত্ত আসমানের প্রভুদের
বিরাগভাজন এই কবিরা, শব্দের নেংটি পরে
কুণ্ডলীর চারপাশে তাদের ক্ষমতার নৃত্যে
বেপরোয়া অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়, সত্যে

উপনীত হয়েছে তারা

কবিতার নির্বিকার স্বভাব রপ্ত করা কতটা সহজ
সহজাত ঔদার্যবোধ, নমনীয়তা সঞ্চালিত সম্পর্ক নিয়ে ভালোমন্দ ভাবনার পর
একখানা কবিতা লিখে বাইরে এসে দেখি বৃষ্টিতে ভিজে গেছে আমার শহর

মানুষের ছায়ার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা আমূল মানুষ
এইমাত্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল কবিতার চিন্তায়৷

 

.

একাগ্র হয়ে কিছু মানুষের ভিজ্যুয়াল টের পাওয়া যায়- সম্মুখে

পাখি বসে থাকলে, পাশে পড়ে থাকে উড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা

(পাখনাযুক্ত
প্রাণীদের উত্ত্যক্ত করতে হয় না)

এই স্বভাবে, বিস্তারিত
আকাশে ভাসে উড়নচণ্ডী বাজপাখি
প্রান্তরে ঘুরে-ফিরে, ধীরে ধীরে ডুবে যায় নির্জন নিওলিথ আরাম
মানুষের শরীরে তখন- রাত হলে বিস্তার লাভ করে মৌলিক ক্যাপারনাম৷

অনন্ত সময়ব্যাপী পৃথিবীতে আছি
ইহলোকে থেকে টের পাই
ধীরে বড় হচ্ছে অনাগত পরলোক
মিজ-অঁ-সিন দৃশ্য সাজাই, দৃশ্যের সম্ভার
মন্তাজ হয়নি, হয়ে ওঠেনি
প্রাসঙ্গিক ফিল্মের শ্লোক

প্রচলিত করে রাখা আছে নিয়মকানুন
বিতণ্ডার সময়ও মানুষ কি করে মনে রাখে মস্তিষ্কের আয়োজন?
এই প্রশ্ন করা হয়ে গেলে ভাবি-
বাকি রয়ে গেল কি না জৈবিক বিপণন

বিজ্ঞ নভোঃজীববিদেরা জানে বৈশ্বিক কাঠামোবিদ্যা
বুড়ো মানুষ ছোট কেন হয়ে যায়, যেকোনো ফলাফল কেন সৃষ্টি করে ভ্রূ কুঞ্চন
এই কবিতা কেন সরে যায় নিজস্ব জায়গা থেকে দূরে, কালবোস মাছ
কেন ধরা পড়ে জালে- অযথা?

নির্ণীত হোক, কবিতা সঞ্চালক অনুজীব দেহে জায়গা করে নিক
মানুষের নিকটে মানুষ আসুক, প্রকৃত সারস একা থাক বসে
নক্ষত্রের সন্ধানে চ’লে যেতে পারা যায় ভেবে পুরো পথ চষে

যদি খুঁজে না পাওয়া যায় কোনো ধাম
নিয়ত মানুষ এই, মানুষের একান্ত মৌলিক ক্যাপারনাম

৪.

প্রকৃতি পরিচয় শুনি মানুষের কাছে, মানুষের একান্ত
কথাগুলি প্রলয়ঙ্করী হয়ে যায়, হতে পারে জেনে
এইসব দুর্যোগে ঘরে ফিরি ধীরে।
ঘরে ফিরি, দু’হাতে সিডর-শামুক-ঝিনুক নিয়ে
শার্টের কলারে কলার কাঁদি, ঘানিভাঙা তেল
অথবা শস্যের অনাগত বৈভব, যতদূর যেতে পারে
নিজস্ব মানুষের ধানক্ষেত- আমরুলী- মহিশান বাড়ি
নিয়তির মত ভাঙাচোরা দেহের স্পিরিচুয়াল- শ্বাশত গ্লানি?

কে দিতে পারে- ডেকে আনো, কথা বলি তার সাথে
কয়েকটি মহাদেশ চোখে ক’রে নিয়ে নাকি দাঁড়িয়ে আছে সে?
আমিও তো তাঁর পূর্বপুরুষ, আমার চোখেও
পৃথিবীর যাবতীয় থিওরি- ডগমা
ঝুলে থেকেছিল কয়েককাল অথবা ঋতু-সমান
অতঃপর নাকি থেমে যেতে হয়- ধীমান,

এমনই নিয়মে

জানা হয়ে গেছে, ধীরে। কবিতার মৌল বিষয় কি হতে পারে
সুরমা মাছের দেশ- ‘যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি দ্বীপের ভেতর’
মাছ খাওয়া হয়ে গেছে, নদীগুলো সব শুকিয়েছে তারপর
চোখের কাছে, চোখের ভেতর সমুদয় বাজনা
কবিতার মৌল বিষয় হতে পারে- আর না
লেখা প্রকৃতি পরিচয়। এছাড়া, মানুষও একে একে বলে দিতে পারে
তাঁর হিস্ট্রি- জন্মবৃত্তান্ত, বৃক্ষবহুল একাধিক সিনেমার প্রেক্ষাপট
এবং সাহিত্য সমালোচনা।
কবিতার মৌল বিষয় হতে পারে, আর না
লেখা চোখের ভেতর সমুদয় বাজনা।

প্রকৃতি পরিচয় শুনি মানুষের কাছে, মানুষের একান্ত কথাগুলি
কেউ তো লিখুক
এসব লিখতে গিয়ে আমার লেখাও মাঝেমাঝে বেড়ে যায় অহেতুক-
মাঝেমাঝে মরেও যায়, চীৎকার ক’রে ডাকে- সাড়া পায় না
এসবও কবিতার মৌল বিষয়- যেমন, আর না
লেখা কিছুই।

 

৫.

হোক প্রেমে পড়া শুভ তবু। বোধদয় হোক গাছের ফুলের, দেহের ঘ্রাণ
থেকে নেমে আসা প্রাণসঞ্চারক বীজ
তোমার জন্মেও কিছুটা মিলনাত্মক নাটিকার মত
অংক থেকে দৃশ্যে চরিত্রের নিজ নিজ
সাফল্যের সাথে সংঘর্ষ হতে পারে- তেমন কিছু একটা
গল্পের প্রাধান্য বহাল থাকুক।

বহাল থাকুক যাবতীয় অনুবাদ, কবিদের যার যার চর্চার মত করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ
এই পৃথিবীর বক্ষে আরেক যুদ্ধের লোভে গঙ্গাপূজা আর স্টেরয়েড সেবন চলুক (ক্ষমাপ্রার্থী হে স্নিগ্ধতা!)
ফুরিয়েছে জাতীয়তাবাদের প্রয়োজনীয়তা, নাকি? পৃথিবীর মানুষ আমরা- এর চাইতে বৃহৎ কোনো যোগ্যতা কারুর থেকে থাকলে
তা-ও সামনে পরিবেশিত হোক, রেকাবে যা যা পানীয় থাকে- তা-ই সমন্বিত
ভেতরে প্রবেশ করবার আগেই তৃষ্ণার্তা জেনে নিক
এখানে আগে এককালে গোলাগুলি হতো, মায়ের দেহ থেকে জোরপূর্বক মাইটোসিস আলাদা করে
ফেলবার মতো করে ছিনিয়ে নেয়া হতো শিশুমুখ
পিস্তল ঠেকিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা শস্যের ক্ষেত
অতীতে থাকা আলোর কণাগুলো বর্তমান হিসেবে পাবার তীব্র উত্তেজনা নিয়ে আমাদের ফ্রিডম ফ্রিডম খেলা

বর্তমানের আলোর কণা কতদূর কোথায় এখন? যাত্রাস্থল?
অদূরে নাকি? এসো ঘুরে আসা যাক একবার
পৌঁছুতে যতক্ষণ লাগে, দেখে নেয়া যাবে তীব্র পৃথিবীরূপ, আলোকচ্ছটা
এছাড়াও কার ক’টা
চরিত্র আছে- তাও শিখে নেয়া যাবে
মূসার লাঠি মূসাকে ছাড়া আর কারুকে দেয়া হয়নি তো, আর কারুকে
তবে কারা করে এইসব সমুদ্রবিভাজন, মানুষের দেহ থেকে শুরু করে গোত্রে বর্ডারে
পাখির খাবার, যোগজীকৃত ভূমি আর পশুর প্রহারে
কারাগার তৈরি করে দিয়ে কারাকারা দূর থেকে দরোজা নাড়ায়?

এইরূপ দর্শন আছে জানি, সহজ মানুষের
চিত্রকলায় বর্নিত হয়েছে অতীতের
জটিল ও কঠিন কাঠামো
বিবমিষা যুক্তও থাকে, ক্রমে- ছবির মতোই বহুবিধ ক্রোধ তৈরি হতে থাকে
বহু নকল হাতে হাতে ঘোরে, আদি ও আসল
কথাগুলি মাদকের মতই গন্তব্য বর্জিত।

পাখির মৃত্যুতে কারুর কিছু যায় আসে নাকি? কে কোথায় কবে দুঃখে পেয়েছে- শুনিনি তো
মানুষও পাখির মত হতে চায় শুনে- আলগোছে ধরে রাখা শ্বাস ধীরে ফেলি, নিজের শরীরেই এসে বিঁধে বহুবিধ হিপোক্রিট শ্বাস।

Related posts