কবিতা গদ্য পর্যালোচনা প্রবন্ধ 

কবিতা, পর্যবেক্ষণের ভাষা, ব্যক্তিভাষা ।। সরকার মাসুদ

কবিতা অনেক রকম। চেহারার দিক থেকে, স্বাদের দিক থেকে কিংবা বক্তব্যবিষয়ের দিক থেকে এই রকমফের। কবিতার এই বহুরূপ সাধারণ পাঠকের মধ্যে বিভ্রান্তির জন্ম দিয়ে আসছে। এরা মনে করেন কবিতা বড়জোর দু’তিন ধরনের। একজন অধ্যক্ষকে কাছ থেকে দেখেছি। ভদ্রলোক বিজ্ঞান পড়েছেন। দেশে-বিদেশে ঘুরেছেন। সাহিত্যও কিছু কিছু পড়েছেন। আধুনিক কবিতা পড়েননি বলা চলে। তাকে মন্তব্য করতে শুনেছি, ‘শামসুর রাহমানের এত নাম-ডাক। কবিতা পড়লাম। ভালো লাগেনি।’ শামসুর রাহমানই তাকে টানেনি। তিনি পঞ্চাশের প্রজন্মের একজন। তাহলে আশির বা নব্বইয়ের প্রজন্মের কবিদের কবিতা পড়লে কী রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন এই অধ্যক্ষ মহাশয়, সহজেই অনুমান করা…

Read More
গদ্য গল্প বিশ্বসাহিত্য 

বেচারার বউ ।। ইউন হি কাইয়ুং

সে যে ডায়েরি লেখে তা আমার জানা ছিল না। লেখালেখির ব্যাপারটা তাকে ঠিক মানায় না। যে বয়সে আত্মপ্রতিফলন কিংবা আত্মসমালোচনার মতো বিষয়গুলো ডায়েরি লেখার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে সেই বয়সও তার নেই। স্কুলে থাকার সময় সে কোনো কিছু লেখার চেষ্টা করেছে বলেও আমি কখনো শুনিনি। এমনকি যে কয়টি প্রেমপত্র আমাকে লিখেছিল সেগুলোও ছিল গতানুগতিক মেয়েলি সেন্টিমেন্টের। সেগুলোতেও তার লেখালেখির প্রতিভার কোনো ছাপ ছিল না। দিনের বেলায় আমি বাড়িতেই ছিলাম। আগের রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরেছিলাম। ঘুমাতে অনেক দেরি হয়েছিল। দুপুর না গড়ানো পর্যন্ত ঘুমিয়েই ছিলাম। জেগে দেখলাম বাসায় কেউ নেই। সে…

Read More
প্রবন্ধ বিশ্বসাহিত্য 

ম্যারাডোনা‌‌‍‌, সকার ইন সান এ্যান্ড শ্যাডো ।। এদুয়ার্দো গ্যালেয়ানো, ভাষান্তর- মঞ্জুরুল ইকরাম

যখনই খেলেছে তখনই জিতেছে। কেবল হেরে যাওয়া মূত্রত্যাগের কাছে! তার শরীরে এফেড্রিন খুঁজে পাওয়া গেল আর নিমেষে তাকে ছুঁড়ে ফেলা হল ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে। আমেরিকা সহ অনেক দেশের ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা এফেড্রিনকে শক্তিবর্ধক হিসেবে না দেখলেও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এই জিনিসটা ছিলো নিষিদ্ধ। বিস্ফোরণ ঘটলো দুনিয়ায়। হঠকারি আর কলঙ্কজনক সব শব্দ আর নিন্দার ঝড়ে বধির হয়ে গেলো যেন বিশ্ব। কিন্তু নিন্দিত নক্ষত্রের সমর্থনে তখনও কিভাবে যেন কিছু আওয়াজ উঠলো। ফিফার প্রতি অনাস্থা আর ম্যারাডোনার প্রত্যাবর্তনের দাবিতে শুধু আহত ও বাকরুদ্ধ বুয়েন্স আয়ার্সই না, কেঁপে উঠলো জগতের দূরতম স্থান বাংলাদেশের রাজপথও। তবে…

Read More
গদ্য পর্যালোচনা 

ফালগুনী রায়ের কবিতায় সত্তা ও অন্যান্য ডিসকোর্স ।। মমিন মানব ।। ৩য় পর্ব

কবিতামুখ ও ফেয়ার এন্ড লাভলি পোয়েট্রিফেস নিয়ে ভাবছি। যেখানে একটা ফেস থাকে। আরও পষ্ট করে বললে বলতে হবে যেখানে একটা ফেসবুক থাকবে। এর জন্য বিভিন্ন ফ্রেন্ড হবে, যারা কেউ কাউকে চিনবে না, জানবে না (কিছুটা হয়তো চিনা/জানা থাকবে)। কিন্তু তারা ফেসবুকফ্রেন্ড থেকে বুক (ইংরেজি হলে জ্ঞানাধার; মানে বই। আর বাঙলা ধরলে তো সর্বনাশ, বুক; মানে হৃদযন্ত্র/হৃদয় যেখানে থাকে) বাদ দিয়ে শুধু ফেসফ্রেন্ডই থাকে। সে হিসেবে ফেসবুককালচার (অথবা ফেসকালচার) নিয়ে আমাদের জানাশোনা খারাপ না। ফেসকালচার থেকেই আমাদের ফেসপোয়েট্রি। অথবা পোয়েট্রিফেস। যার বাঙলা দাঁড়াবে কবিতামুখ।   মুখ শব্দটা আমরা মুখ ও মুখমন্ডল…

Read More
গদ্য পর্যালোচনা 

ফালগুনী রায়ের কবিতায় সত্তা ও অন্যান্য ডিসকোর্স ।। মমিন মানব ।। ২য় পর্ব

ফালগুনী রায়ের কবিতায় সত্তার ডিসকোর্স: সত্তার প্রকাশ বা উম্মোচন ব্যক্তি ও ব্যক্তির সম্পর্ক যেখানে স্বাধিন যেখানে একে অপরের উপর ক্ষমতায়িত নয়, সেখানে সে নিজের অস্তিত্ব নির্ধারন করতে পারে। ব্যক্তি বা সমাজ বা রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে অন্যের অস্তিত্ব লীন করে নিজের ক্ষমতায়নের জন্যে ব্যবহার করে। সেই রূপান্তর হয় জোরপূর্বক অথবা স্বেচ্ছায়।   স্বেচ্ছায় বলতে আপাত দৃষ্টিতে স্বেচ্ছায়। কিন্তু এখানে ব্যক্তি মানসিক বা দার্শনিক বা চিন্তাগতভাবে পরাধিন থাকায় নিজের স্বাধিন ক্ষমতা বুঝতে অক্ষম। তখোন তার ক্ষমতা তথা অস্তিত্ব সে বুঝতে পারে না। তার মঝে আমি বলতে কিছু থাকে না।…

Read More
গদ্য মুক্ত গদ্য 

এদুয়ার্দো গ্যালেয়ানোর তিনটি গদ্য, ভাষান্তর- মঞ্জুরুল ইকরাম

লাতিন আমেরিকান সাহিত্যিক এদুয়ার্দো গ্যালেয়ানোকে এমন এক পুলিশ বলা যেতে যিনি ক্ষমতাশালীর কলমে লেখা ইতিহাসের চাতুর্য্যকে গ্রেফতার করেছেন। তাকে বলা যায় এমন এক মারদাঙ্গা কবি যার হাতে ছোট্ট সব গল্পে অন্ত্যজ সাধারণের বয়ানে সৃষ্টি হয়েছে অভিনব এক জুক্সটাপোজ, যাকে কবিতা বললেই বেশি মানায়। ফুটবল অন্তঃপ্রাণ এই মহান সাহিত্যিকের দিকে বিশ্বের নজর জোরেশোরে পড়ে যখন হুগো চাভেজ বলিভিয়া সফরে আসা বারাক ওবামার হাতে তুলে দেন গ্যালেয়ানোর ‘ওপেন ভেইনস অব লাতিন আমেরিকা’ বইটা। তবে মিররস মূলত আকারে ও প্রকারে আরো হয়তো বিশাল। প্রাগৈতিহাসিক থেকে বর্তমান মানুষের গল্প বলে গেছেন তিনি প্রতিচ্ছায়াবাদী বিবরণ…

Read More
গদ্য পর্যালোচনা 

ফালগুনী রায়ের কবিতায় সত্তা ও অন্যান্য ডিসকোর্স ।। মমিন মানব ।। ১ম পর্ব

অশুদ্ধ চিন্তার এক কবিতাঅলা কবিতা মূলত কবির অনুবাদকৃত সত্ত্বা; যা অক্ষরে অক্ষরে প্রকাশিত হয়। কবি তার স্বপ্ন ছাড়া ভিন্ন কোনো সত্ত্বা নয়। তাই কবিতা গুলো কবির স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন আকঙ্খা-অনাকাঙ্খা প্রেম-অপ্রেম বাঁচা-নাবাঁচা সবকিছুকেই প্রকাশ করে। একই সাথে নিজেকে চিনতে গিয়ে কবি তখোন প্রশ্ন করে সবকিছুকে। তখোন কবি ধর্মের ভিতর খুঁজে পায় অর্ধমকে ইতিহাসের ভিতরে খুঁজে পায় মিথ্যাচারকে আইনের ভিতরে খুঁজে পায় আইনবহির্ভূত ব্যবস্থাকে। তাই সবগুলো বিষয়ে কবি নিজের ভিতরে নতুন এক সঙ্গা ধারণ করে। এবঙ লালনও করে। কবিতা তখোন আর আগের মতোন কবিতা থাকে না; হয়ে উঠে অকবিতা নাকবিতা অথবা অকাব্যিক কবিতা।…

Read More
গল্প 

পরিসমাপ্তি ।। সারোক শিকদার

লাশটা চাদরে ঢেকে আমি লিও রোজাসের প্যান ফ্লুট ছাড়লাম। শীতকাল। এক ঝাঁক তীব্র রোদ নিষিদ্ধ সিনেমার পোস্টারের আকৃতিতে লেপটে আছে মেঝেতে অথবা আমি কি এখন তুর পর্বতে দাঁড়িয়ে! দেয়াল ভেদ করে একি ঈশ্বরের আলো! আমার হাতে মসীহের লাঠির আদলে একটি ছুরি, যার জিহ্বা গড়িয়ে লোহিত ধারা নামছে…আঙুল ভিজিয়ে…কব্জি ভিজিয়ে… চকচকে টাইলসের উপর। বিন্দু বিন্দু কৃষ্ণচূড়া। অথচ আরও বেশি অন্ধকার আরও বেশি প্রয়োজন। জানলার পর্দাটা ঠিক করতে গিয়ে দেখলাম বাইরে বেশকিছু শুকনো পাতার উপর দিয়ে নয় মার্কা চকচকে কাঠবিড়াল ঘুরছে। আমার পরিচিত। একবার ইচ্ছা করছিল ওদেরকে ঘরে আমন্ত্রণ জানাতে। আবার মনে…

Read More
গল্প 

কলমি ।। তাইবা তুলবি

একটি ছোট্ট মেয়ে, তার নাম কলমি। ক্লাস টু-তে পড়ে। দেখতে মিষ্টি হলেও চুপচাপ গোছের সে নয়। বুদ্ধিমতী এবং বেশ পাকা কথাবার্তা। সে হাঁটছে তার মন যেদিকে যেতে চাইছে। স্কুল ড্রেস পড়ে হাঁটছে মুক্ত পাখির ডানার মতন উড়ু মনে। দু’পাশে গাছ মাঝে রাস্তা, ঠান্ডা হাওয়া। সাদা ফিতায় তার চুল দুলছে। অপরিচীত রাস্তায় তার হাঁটতে মোটেও দ্বিধা হচ্ছে না। স্কুল একটা জেলখানা। পোশাক পরে কয়েদিরা যেমন যায় ঠিক তেমনই, মনে মনে ভাবে কলমি। আজ সে স্কুলে যাবেই না। স্কুলে যেতে তার একদমই ভালো লাগে না। আজ সে হাঁটবে। স্কুল চুরি করবে। হাঁটতে…

Read More
গল্প 

দ্বন্দ্ব ।। তাসনিম হালিম মিম

রোজকার আড্ডা দেওয়ার জায়গাটা অনেক বেশি শান্ত দেখাচ্ছে। হল্লানেই, তর্কনেই। দেখে মুহিব নিজের অজান্তেই সামান্য চমকায় তাদের পাড়ায় ঢোকবার এবং বের হবার যে একমাত্র রাস্তা সেটির মাথাতেই ঈসমাইল চাচার চায়ের দোকান। দোকান ঘেঁষে বসিয়ে রাখা তিন চারটি কাঠের বেঞ্চ মুহিব আর তার বন্ধুদের আড্ডা মেরে সময় কাটাবার তীর্থস্থান। মুহিব, অনন্ত রহমান, আর মাঝে মাঝে সেতু। এই পাড়ায় মুহিবরা আসার পর থেকেই ওদের সাথে বন্ধুত্ব। পকেটে কড়ির ঘাটতি থাকায় এবং ঈসমাইল চাচার উপর মায়া পরে যাওয়ায়, একেবারেই বাহুল্য বিবর্জিত এই চায়ের দোকান ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে বসার কথা ওরা ভাবতেও পারেনা।…

Read More