কবিতা 

মাহমুদ সিফাতের ৫টি কবিতা

 

খড়া

এই অনুর্বর মগজ থেকে মুছে রেখে যাও তোমার নাম

 

অথবা, শান দাও কোদালে;

আমাকে খুঁড়ে বের করে আনো জল

ভেজাও প্রেমে

ওড়াও প্রেমের বেঢপ রঙিন ঘুড়ি।

 

তুমিও ভিজো, ডুবে থাকো আকণ্ঠ

আমার ভেতরে ঘটুক তোমার আমৃত্যু নিমজ্জন। 

 

 

এবং শরৎ

আমার আয়নায় ভেসেছে শরৎ, লেগেছে দূরবিস্তৃত নীল

তবু সাদা মেঘ ভেসে ভেসে আসে অযাচিত আলাপন

ঝড়ের মতো ক্ষুধায় ভেঙে পড়ছে উদর

মিথ্যে ছাড়া খাদ্য বলে কিছুই নেই

 

ফোটেনি ফুল বাগানে আমার

আকাশে ওঠেনি চাঁদ

ঝিঙেফুলের মাচা ভেঙে কে গড়েছে প্রাসাদ

 

স্কেচবুকে মারা যায় একে একে তেত্রিশটি প্রজাপতি

চোখ বন্ধ রেখে করেছি ধ্যানের ভাণ 

জীবনের প্রবাহকাল দ্রুত থেকে দ্রুততর 

ছুটছে, খসে পড়ছে একেকটা প্রতারক দিন

 

ফিনফিনে প্রজাপতি হয়ে জন্ম না নিয়ে

মানুষ হবার ঋণ মেটাবে কে? 

কে দিবে হৃদয়ে জ্বরের অব্যর্থ ওষুধ? 

 

  

গিঁট

হতে পারে সুতা ছিঁড়ে যায়, কথা বলে না 

আরো ভাবনা ঘাড়ে চেপে বসে

চুপটি করে থাকা বিমর্ষ ছবি

অথবা অস্পষ্ট পাখি, যে উড়ে চলে যায় 

নিরঙ্কুশ ভ্রমণ লিখেছে খোদা

ছোঁয়াছুয়ি খেলার বয়েস হয়েছে পার

 

বাজারের ব্যাগ ভর্তি দ্বায়িত্ব আর ক্লেশ 

সংসার ধর্ম পালনের মসজিদ, ঘর

অপবিত্র করে রাখা মেঝে ও বেসিন

সংযোগের নতুন ফিলামেন্ট হারিয়ে

কিছু ভীতু চারাগাছ খুব ভিতরে 

ডাল মেলে দিয়েছে ভয়ের

 

 

অপেক্ষার পেন্ডুলাম

অনাদিকাল দোলাবো অপেক্ষার পেন্ডুলাম, পথ পানে চেয়ে থাকবো। প্রিয়দের ডাকে সাড়া দেবো ঋণাত্মক বচনে। 

 

তারা ঘাসের উপর সঙ্ঘবদ্ধ বসে থাকে। এন্ট্রোপির প্রবল উঠানামায় বুঝে নেবো দোলন। 

 

কি ক্ষুদ্র নিক্ষেপে দুলে ওঠে বৃহৎ পুকুরের জল!

নেচে নেচে ছড়ায়, নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ক্রমাগত

পাকা ফলের মতো ভীরু স্থিরতা ভর করে চোখে, 

 

অপ্রিয় হয়ে ওঠা বিগত প্রিয়তাদের আঁচলে ডুবে গেছে  একেকটি সূর্য, গোধূলির মতো লাল নিয়ে চোখে।

নেশাতুর বসে থাকবো সবুজ ঘাসের গালিচায়

মনে মনে গান গাইবো, ভাববো ঘড়ির কথা।

 

স্থির ভ্যানে বসে পা ঝোলাবো, পথের দিকে

তাকাবো অস্থিরতায়, 

 

দুলছে অপেক্ষার পেন্ডুলাম।

 

 

শিমুল ফুলের কথা

বহু কাঙ্ক্ষিত শিমুলের লাল 

ক্ষণজীবী দৃশ্যপট সৃষ্টি করে।

শেষ বেলায় নদী ক্রস করে

নেশা ছুটে গেলো ফিরতি পথে।

 

শুকনা সাঁকো আড়াআড়ি হেঁটে 

পার হয়ে ধনিয়া ফুলের ক্ষেত 

আল জুড়ে নেশাতুর হলো। 

 

সামনে নদী আর ভেতরে শহর— 

ভারবাহী ঘোড়া অনিচ্ছার অ্যারেনা 

থেকে স্বল্পায়ু পলায়ন করে।

 

বসন্তে পলাশ ফুল মনে পড়ে

পলাশ পছন্দ হইলেও আমার 

শিমুলের কথা মনে পড়ে;

শিমুল আমার শৈশব।

 

সময়ের প্রবাহ নিয়া নদী

ঈষৎ বাঁক নেয়

ক্রমশ বিলীন হতে থাকে অগোচর

পথ ভুল করে ভাসে প্রত্যাশার তরী 

ভগ্নহৃদয় মন্দিরের পাশে 

একটি শিমুলগাছ আশা করে

 

Related posts