বন ভারাক্রান্ত মন ।। আদিত্য আনাম
বন ভারাক্রান্ত মন: ০১
মনের ভিতরে আছে এক বন।
সেই বনের ভিতরে আছে কিছু বিপদগ্রস্ত গাছপালা।
আছে বিমর্ষ বাঘ ও হরিণের সোনালি চিৎকার।
সেখানে শিকারি হাঁটে;
হাঁটে করুণ সরল শিকার।
ফুটে আছে শতশত রঙিন,
মায়াবী, গোলাপি, ব্যথাতুর ফুল।
কতকত রকমারি ফল।
পাকে ,ভয়ে ভয়ে নিস্তেজ হয়ে যায় অবহেলায়।
সেখানে বাস করা আমি এক অশ্রুবিদ্ধ কবি,
হেঁটে আসি ভাবনার গোধূলি বেয়ে।
অথচ আমার কোনো একান্ত গাছ নেই।
ব্যক্তিগত পাখি নেই, ফুল নেই;
নেই কোনো পালকমুগ্ধ ওড়াওড়ি
কেবল ক্লান্ত হাওয়া,
তারসাথে ভিতর ও নিজের ভিতর ব্যর্থ আসাযাওয়া।
বন ভারাক্রান্ত মন: ০২
দেখতে দেখতে দৃশ্য হয়ে যাওয়া পাখিটি
আমার পবিত্র আত্মা যার আধ-খাওয়া ফল হাতে নিয়ে
আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠিক আমার ভিতরে একা একা।
বন ভারাক্রান্ত মন: ০৩
না, আমার কোনো বেঁচে থাকবার তাড়া নেই!
নষ্টার্থে জীবন এক ব্যর্থ ঘুম
শুদ্ধার্থে মৃত্যু এক আনন্দগুচ্ছ
প্রেমার্থে আমি তোমাকে ঘৃণা করি
শূণ্যার্থে তুমি আমি আমাদের
পূণ্যার্থে কখনো কেউ কারো নয়
না, আমার মৃত্যুর প্রতিও কোনো আস্থা নেই!
বন ভারাক্রান্ত মন: ০৪
সমস্ত দৃশ্যের ভিতরে আমার একটি চাঁদ গলে যায় অনাদরে।
সমস্ত ঘুম আমাকে চড়িয়ে দেয় বিকলাঙ্গ স্বপ্নের ডালে।
আমি নির্ঘুম চোখ নিয়ে ঝুলে থাকি
আর সমস্ত ডালে আমার সাথে ঝুলে থাকে
একটি ফল নাম তার আদিত্য আনাম।
বন ভারাক্রান্ত মন: ০৫
স্মৃতির লাশ কাঁধে নিয়ে একা একা
পায়ে পায়ে হেঁটে আসে বিরল পথ।
এখানে বহমান নিহত হাওয়ার মিছিল
শ্লোগান ছড়াচ্ছে
আহত বাগান জুড়ে পরাজিত ফুল।
মনে মনে দানাবাঁধে গহীন কালো মেঘ।
দুঃখের পূর্বাভাস জানে চিরায়ত চোখ
জানে অতর্কিত বিপদসীমা।
বন ভারাক্রান্ত মন: ০৬
অদেখা এক একান্ত গহীন শূন্য বাগানে
আমি এক পরাজিত ফুল, ফুটে থাকি নিজের ভিতর,
আমার দিকে উড়ে আসে ডানাওয়ালা হাত।
ক্ষুধার্ত আঙ্গুল দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে আমাকে
খুব দ্রুত নিয়ে যায় কেউ!
বিস্তীর্ণ হাতের মুঠোয় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা
খণ্ড খণ্ড প্রতিটা পাপড়ির দানা-ই আমার লাশ!
বিমর্ষ হাওয়ার স্রোতে উদ্বিগ্ন মেঘের চিতা
অর্থহীন আগুনে পুড়ে ক্রমাগত নীল!
বন ভারাক্রান্ত মন: ০৭
জলের অলঙ্কার পড়ে নিয়ে আমি ঢুকে গেলাম
একটি প্রতিবাদী মাছের আত্মায়।
মাছটির নাম ক্রোধ
যে স্নেহের নদীতে নেমে কাটছে অসহ্য ডুবসাঁতার।
অসংখ্য স্রোতের ব্যারিকেড পেরিয়ে এসে
ধারালো জলের তলে অবশেষে জেনেছি
নদীর মহানুভবতা ঠিক আকাশের সমান।