মদসংখ্যা- মাতাল সার্কাসম্যান ।। সোয়েব মাহমুদ
আমার একপকেটে ছিলো সুনীল সমুদ্র, একপকেটে আকাশ। আমি হেটে বেড়িয়েছি হেলসিংকি, পাফোস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, জেনেভা, ইস্তাম্বুল, সেন্টপিটার্সবার্গ, জেনোয়া,বুয়েন্স আইরিস,বোগোটা অথবা লিমা সহ নাম হারিয়ে ফেলা বহু শহর। আমি জীবনকে খরচ করেছি দেদারসে, দুহাতে দুপকেটে যা ছিলো পুরোটাই। জীবনকে উড়িয়েছি কফিশপে, পুড়িয়েছি অহর্নিশি রাস্তার ধারে জ্বলে থাকা পেরিপতেরো অথবা ২১ উর্ধ্ব নারী প্রবেশ নিষিদ্ধ আইয়ানাপায়।
আমি একদিন হাসতে হাসতে খরচ করেছিলাম আয়ু, বলেছিলাম সঞ্চয় শব্দটি লিখতে আদতে কয় অক্ষর প্রয়োজন?
আমি একদিন চীতকার করে ভাঙিয়েছিলাম গ্রীকপূরাণের ভূল। ট্রয় নগরী আসলে তুরস্কের এককোনে জেগে থাকা ইতিহাসের ভূল বৃদ্ধ।
এভাবে আমি ১৫তে হয়েছিলাম ২২ এর অভিজ্ঞ। ২২ এ ২৭, ২৭ এ ৪৬, ৩০ এ সত্তরের অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত আমি একদিন হারিয়ে ফেলি চেনা ডাকবাক্স, চেনা গলিপথ, চেনা আমার অচেনা ঘর।
আমি একদিন দেদারসে জীবন খরচ করতে করতে ঢুকে পড়লাম গুহায়, ঘোড়সওয়ার।। ঈশ্বর বন্ধ করে দিলেন খাতা, আটকে দিলেন গুহামুখ, এরপর প্রায় পৌণে পাঁচশো বছর মানুষ দর্শণীতে কান পেতে শুনে নিচ্ছে পায়ের শব্দ খুঁড়ের আওয়াজ।।
একদিন দেদারসে জীবন খরচ করতে করতে আমি জানলাম দিনটি ছিলো শুক্রবার, বছরের ৪৯তম সপ্তাহ। বরাবরের মতন আমি চলে যাবার পরই মানুষ লিখলো ” সোয়েব, তুমি থেকে গেলে পারতে।”
অথচ আমি আমার জীবন খরচ করেছি, উড়িয়েছি, পুড়িয়েছি দেদারসে কেবল বুকের কাছে থাকা ডাকবাক্স দেখবো বলে।
২.
মদ খাবার পর তুমি আরো গাঢ় হয়ে বসে যাও, তোমাকে সরাতে পারি না।সরাতে পারি না আমাদের সিএনজিতে বাড়ি ফেরা প্রথম রাত, সরাতে পারিনা পানির বোতল সরিয়ে একাকার দুটি হৃদয়, সরাতে পারি না রিক্সায় তোমার চোখে একে দেয়া সহস্র রাত। মদ খাবার পর আমার একমাত্র বিষন্নতা তুমি উত্তরের মেঘ, ক্ষমা চাওয়া হয় না। মদ খাবার পর আমি যতই কবিতা পড়ি না কেনো আদতে আমি তোমাকেই পড়ে ফেলি সারারাত। এত করে বলছি নিজেকে নিজে তোমার ফটোগ্রাফ যেনো নৃতত্ত্ববিদ্যার গবেষণা আজকাল,তবুও কেনো জেগে ওঠো ওত পাতা সন্নাসী লিঙ্গের মতন। আমি তোমাকে ভুলে যেতে চাইনা আবার মনেও রাখতে চাইনা অথচ সুরার মতন তুমি তেলাওয়াত হতে থাকো রুহ’তে আমার।আমি সরাতে পারি না।আমি মুছে দিতে পারি না।অথচ জানি তুমি ছবি পাঠাচ্ছো না আর! অথচ জানি তুমি আরব্যোপন্যাসে নতুন চরিত্র ব্যোমকেশ অথচ জানি তুমি মাথাব্যথায় শুয়ে আছো।অথচ জানি আমি তোমার চোখে লেপ্টে দিয়ে ঘুম, আছি অথচ পৌঁছাতে পারছিনা। মদ খাবার পর কতদিন ভেবেছি টলোমলো পা’য়ে ফিরবো বাড়ি ,অথচ তোমার নীল শাড়ির ছবি আমাকে কবিতায় নিয়ে যায় ,শেখায় তোমার প্রিয় পিথাগোরাসের উপপাদ্য ।আমি হেড়ে গলায় গান গাই,বলি এসব বিজ্ঞান ছেড়ে এসব গাছেদের সাহিত্য ছেড়ে রাস্তায় নেমে দেখো আমি, আমিই প্রেমিক,একমাত্র প্রেমিক তোমার- এক মাতাল সার্কাসম্যান। চিৎকার করে জুতার ভেতর চিঁহি ডাকের ঘোড়া
স্কেচ- স্নেহা দাস