কবিতা 

মদসংখ্যা- মদ ও অভিজ্ঞতার ঝুলি ।। জবা রায়

জীবনের ঝাকি খেয়ে যেভাবে টলছি তার মদ না খেলে চলে? মদ হলো গুগল আর্থের মতো এর ভেতর দিয়ে আমি টলটে টলটে পৃথিবী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যোগ করি। মদ শব্দটা শুনলে হঠাৎ করে আনন্দ লাগে! ফুরফুরে আনন্দে তলটে থাকি! এ আনন্দের কারণ খুঁজতে গিয়ে মনে হলো হাজং ভাষায় মদকে মদই বলে! তাই ছোট থেকে কষ্ট করে বাংলায় মদ শব্দটাকে হাজং ভাষায় অনুবাদ করে বুঝতে হয়নি। কিভাবে জানি ছোট থেকে মদের সাথে খেলাধুলা করে বয়স বাড়তে থাকে! ছোটবেলা কেটেছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি গ্রামে। বিভিন্ন উৎসব, পূজা-পার্বণ, বিয়ে বাড়ি কিংবা অতিথি এলে আনন্দের পানীয় হিসেবে মদই পান করতে দেখেছি গ্রামের বয়স্কদের (মদ বিরোধী দলও আছে কিন্তু!)। মামা ভীষণ মুক্তমনা হওয়াতে মদের সাথে ছোটকাল থেকেই পরিচয় ঘটে। বাড়ির কোন অনুষ্ঠানে মদ খেলে মামার দিকে তাকিয়ে থাকতাম তখন মামা জিজ্ঞেস করতো আমি পান করতে চাই কিনা। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে মাথা ঝাকি দিয়ে হ্যাঁ বললে বোতলের ছিপি দিয়ে আমাকে এক ছিপি মদ দিতো। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে খুশিতে খেতাম! আসলে নিষিদ্ধ জিনিসপত্র আমাদের সবসময় কৌতুহলী করে ফেলে! তখন জানতামই না মানুষ কেনো মদ খায়! মদ শব্দটা শুনলে শৈশবের আরেকটি কাহিনী মনে পড়ে। ছোট মার সাথে এক বিয়ে বাড়িতে গিয়ে লাল চা দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম এটা কি মদ? এ প্রশ্নে ছোটমা লজ্জা পেলেও বাকিরা সম্ভবত ভেবেছিলো আমি মদখোর! ছোটদের চা আর মদ খাওয়া বড়রা ভালো চোখে দেখতো না। এই দুটা জিনিসই লাল টাইপ হওয়াতে গোলমেলে লাগতো বেশ! কমলালালচে ব্যাপার মদ ছাড়াও অন্যকিছু হতে পারে নাকি? মদ আমাকে আরেকটি অনুভূতি দিয়েছে, সেটি হলো নিজেকে মানুষ ভাবতে পারার অনুভূতি! কারণ মদ হলো এমন জিনিস যেটা কখনো নারী-পুরুষের তফাৎ করে না। মানুষের পেটে গেলে তার বহুমুখী যোগাযোগ দারুণই বটে! আসলে ছোট থেকে দেখে এসেছি গ্রামের সবাই (নারী-পুরুষ) বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একসাথে বসে মদ খাচ্ছে, আনন্দ করছে, সেখানে একদম নারী-পুরুষের কোন বিভেদ নেই! এই অভিজ্ঞতা আমাকে মানুষ ভাবতে পারার সুযোগ করে দিয়েছে। মদ নিয়ে ভালো কথাও বলতো মুরুব্বিরা সেটা হলো নিজেদের তৈরি করা মদ নাকি অল্প খেলে হরমোনাল অনেক সমস্যাও দূর হয়। বিশেষ করে মিন্সট্রুয়াল সমস্যাগুলো দূর হয় এরকমটা বলতো! মদের সাথে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভারী! সে গল্প লিখে বলা সম্ভব নয়! পরিশেষে এটাই বলতে চাই- মদ পান করুন, অতিরিক্ত নয় পরিমিত। মদ সবার অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী করে টলতে থাকা পৃথিবীকে করুক আনন্দমুখর।

Related posts