কবিতা 

তনুজের সাত কবিতা

এখনও ঘাসের ছিটকিনি খুলে বসে আছো?


কাল একটা ফাঁকা ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে
মিনিট পনেরো দাঁড়িয়ে থাকার পর

আজ আরেকটা ফাঁকা ব্রিজের
রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি

আমার অনুপস্থিতিতে

আমি, আমি, আমি।

 


(মীর তাকি মির-কে, তাঁর ওষ্ঠপাশে,
তাঁর চরণকমলে)

কী দীর্ঘ রাত হেঁটে এসে মীর,
জনশূন্য হয়েছ আখেরে?

এত জনশূন্য হয়েছ তাকি মির যে
বিরামপন্থাকে সহনীয় ভেবে

বলেছে কেউ যদি দেখ একবার,
কী তীব্র সকাল

পানপাত্র বাজি রেখে তুমিও বলেছ
অনিমেষে, এই তো সময় হল স্বকাল, স্বকাল।

 


ঈশপের অপ্রকাশিত গল্প
~

ঘোষণা করা হয়েছে,
পতাকা উত্তোলন ও কুচকাত্তয়াজ শেষে
বিতরণ করা হবে কুচোনিমকি ও ল্যাংচা।

সিট ছেড়ে উঠছি না কেউ।
টানটান স্বাধীনতা দিবস চলছে।

তারপর আরও কয়েক বছর। কুচোনিমকি ও
ল্যাংচা। ল্যাংচা ও কুচোনিমকি। তাদের পিঠে
হলদে রবারের দাগ, প্রয়োজনে গভীর।

এভাবে একদিন যখন আমরা কুচোনিমকি ও
ল্যাংচার স্বাধীনতায় অভ্যস্ত হয়ে যাই,

আমাদের স্বাধীনতা দিবসের ধূলো
খেতে দেয়া হয় তখন।

 


অডিটর জেনারেল তার
সংক্ষিপ্ত ভাষণে স্পষ্ট:

অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের
জোড়া কর্ণ প্রয়োজন

তাদের নাম যথাক্রমে,
গ্রহণ ও বর্জন।

 


স্বভাবের নির্দেশেই
বিরোধিতা করছি

কখনও আবার
স্বভাবের বেশি বিরোধিতা
করে ফেললে স্বভাবতই
ভাবনা হয়–

বেশি বিরোধিতা করে
ফেলছ না তো,
হে অকিঞ্চিৎকর,
গাঁয়ে মানে না তবু
বহুস্বর,
অথর?

 


মন্দিরের রহস্য ফাঁস করার পর
তারা এগিয়ে যেতে থাকে
মসজিদের দিকে

তৌহিদের রাস্তায় জামার বোতামের মত
সালাত পড়ে আছে, এখানে-সেখানে

তাদের মাড়িয়ে এগিয়ে যেতে
থাকে তারা, নফসে আম্মারা

তবে পায়ে হেঁটে কি পৌঁছোনো যায় মসজিদে?
মসজিদ কি গন্তব্যে থাকে?

মন্দিরের রহস্য ফাঁস করার পর
তারা খুঁজে পায় না
প্রতীকের চেয়ে বেশি মসজিদ কোনোখানে

কোথায় খুঁজে পাবে?

মসজিদ নির্মাণ না করলে কী আর
মসজিদ দর্শন হবে?

 


এই অস্তিত্ব সত্যিই লিঙ্গের
কোমলরূপ কী না, তা পরীক্ষা করতে
নিজের লিঙ্গ কেটে লিফাফায় ভরে
পাঠিয়েছি তোমার গুলাগ-ঠিকানায়

তারপর একটা পেপারব্যাকের চেয়েও ফুরফুরে
আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি শহরের আনাচে-কানাচে,
সস্তা হোটেলের ক্রকারিতে, ফ্লাইওভারের নিচে
কোনো অনভিপ্রেত ট্রেঞ্চকোটের বিদীর্ণ পকেটে—
আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি অনিমিখ জনস্রোতের
আনমনা রুমালে-রুমালে, গণিতে, বিলাপে

এক অদৃশ্য বাজিকর আমি
অংশ নিচ্ছি শহরের সমস্ত দ্যূতক্রীড়ায়

নারীরা আমার সামনেই মিলিত হচ্ছে নারীদের সাথে,
বিশ্বাসীরা মিলিত হচ্ছে রুগ্ন পাদ্রির সাথে,
শ্রমিকেরা মিলিত হচ্ছে বিমূর্ত শ্রমে — এত পরাজিত,
এত রুদ্ধশ্বাস হয়ে গেছি, সামান্য হেরফেরে

নিরাপত্তারক্ষীরা আমাকে ছুঁয়েও দেখছে না,
আমি তাদের পায়ের পাতায় পাতায়
এক অতিরিক্ত মর্মর হয়ে
কবেকার শাম্ব-গতিতে চলে এসেছি ক্রেমলিনে,

‘ফর একজিকিউশন’ লেখা এক হিরণ্য প্রতীতির ভেতর

‘নাদিয়া মালকোভিচ, ফর একজিকিউশন!’

আমি তোমার কাছে ফিরে আসছি নাদিয়া,
তুমি পার্সের নিভৃতে রাখা
আমার যন্ত্রণাকে বার করে পরে নাও
বিরল আংটির মত, যেন এই
পাতার মর্মরকেই বিবাহ করেছ
অথবা পরে নাও যেভাবে বরফের দেশে
ফুল্লরা পরে স্ট্র্যাপ-অন পাতালে প্রবেশের আগে

আমি ফিরে আসছি, নাদিয়া—
এক দৃশ্যাতীত আমি,
জোনাক-সহিস আমি
ফিরে আসছি
তোমার বন্ধ চোখের কাছে।

ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথ
আমার শূন্যতার ভারে ঝমঝম করছে।

Related posts