কবিতা 

কয়েকটি কবিতা ।। জেরী চন্দ

 

বিহান


 

১.

হাজার চিঠি চিৎকার পাঠানো হয়েছে

উপত্যকার শিশুদের কথা ভেবে

ঈশ্বর মৃদু হেসেছেন ঘুমের ঘোরে-

সেদিন থেকে ঈশ্বরকে ঈর্ষা করেছে উপত্যকার শিশুরা

 

২.

রোদমাখা চেহারা নিয়ে

জন্ম নিয়েছে এইচআইভি পসিটিভ শিশু

বড়দিনের ভোরে-

ক্রুশবিদ্ধ পায়ে হিমশীতল কালো রক্ত,

আর দেখা যাচ্ছে না

এবারে আমি সব অভিজ্ঞতা জলাঞ্জলি দিয়ে

একটি খাদে নেমে যাবো

 

৩.

হাঁসের মাংস পুড়াচ্ছে কতগুলি উপজাতি বালক

আমার কোনো বাড়ি নেই

আর থাকলেও-

সেখানে আমাকে আর থাকতে দেওয়া হবে না

আমি অচেনা মানুষ

অপূর্ব অজস্র অচেনা মানুষের সঙ্গে বসে ভাত খেয়েছি বহুবার!

 

৪.

ওরা এখন অক্লান্ত ঘুমে ঘুমিয়ে আছে

আমি হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা হারাই

আমাকে থ্রেট দেওয়া হয়েছে

যদি পারি,অনেক দূরে চলে যেতে পারি

যদি যেতে চাই সকল অচেনা মানুষের সঙ্গে-

আমি চলে যেতে পারি

গিয়েছিলাম, গিয়েছিলাম তো

আধ রাস্তায় ওরা ছায়া হয়ে গেছে

কেউ হয়ে গেছে আরেকটা গলি

 

৫.

কোথাও যেনো হারিয়ে যাই

হাসপাতালের ছাদে,মেলা কাপড়ের মধ্যে হিমশিম

খায় দু একটা কাকপাখি

ঘুমন্ত রোগীদের ঘুমে স্বপ্নের মতো জেগে থাকে-

ঔষধের রেশ

 

৬.

হাসপাতালের ছাদে চুরি করে উঠে গেলেও-

বেশিক্ষন দাঁড়ানো যায় না

মরা রক্তের গন্ধ নাকে লাগে বলে

আমি বমি করি

চিঠি পাঠাই

কখনো

চিৎকার

প্রত্যুত্তর আসে না

নিঃশ্বব্দ পাতা হীন বন অপরিচিত , কত আপন

বনের অনেক গভীরে চলে গেলেও শেষ হয়না-

অহর্নিশ দূর দূরান্ত

আমাদের সম্মূখে খুলে যায় মানসিক হাসপাতালের মেজাজহীন দরজা

 

পশ্চিমের শহর


 

১.

মা তার যে নিয়মে পাগল হয়েছে

বাবাও মরেছিলো সেই নিয়মে

বিভ্রান্তি সৃষ্টি ছাড়া এক অসুখ

নেমেছে লুব্ধক পথগামীদের দেখা

কুয়াশা উল্লাসে।

 

২.

খা খা পঙ্গু বালক তার

উচ্চাশা নিয়ে আঁচর কেটেছে

নীলিমার স্তব্ধতায়

লিখতে চেয়েছে

নিঃশ্বাস নেওয়া যত নক্ষত্রের নাম।

 

৩.

জেনেছিলো রসিক একদিন

হেঁটে যাওয়া আর হাওয়ার বেহাগ

পরিহাস

তারপর সময় মিলেছে দ্বিখণ্ডিত মগজে

আলো ছায়া সুনিবিড় করেছে পরিচালকের হাত।

 

৪.

তিন পার্বত্য জেলার অতিরিক্ত

পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি

স্বাভাবিক হয়- তাকাও,

রাস্তার ভাঁজে আগুন জ্বলেছে

প্রত্যক্ষ শীত উদযাপন।

 

৫.

জীবন জীবিকা নির্বাহ নির্ণয়

আমাদের চোখের ইশারায় স্থির হয়ে আছে,

ঠিক যেমন ঘুম স্বপ্ন-

আধার নিয়ম জানি প্রথম দিন থেকে।

জীবন আমাদের অতিক্রম করে

অপরিচিত অভ্যাস করেছে আত্মার অন্তর্ভুক্ত।

বাকলবর্জিত ভোরের শরীরে

হাঁটু অব্দি কিছু শুদ্ধতা উজাড় করেছে

সুনামের পাঁপড়ি-

কুড়িয়ে নিয়েছে বন্ধুদের হাসিমুখ আর

অনুভূতি।

 

 

স্তব্ধতা


 

১.

আজ তুই চুপ করে থাক

কতজনের হাঁটাচলা তুই মেনে নিতে পারিস

মানুষের হৃদয়ের পথে।

আজ তুই চুপ করে থাক !

বুকের পাঁজর চিরে তুই বোঝার চেষ্টা কর

আরো বেশি করে বিশ্বাস কর

আকাশ এক মহাশূন্য পরিহাস

 

২.

রাবার বনে রোদ লাগলে

ঝলসে উঠি আমি

কুকুরের রাত ভেদ করা ডাক

আরো ঠেলে দেয়

বিষণ্ণ পাহাড়

 

৩.

তুই আজ ঘুমের ভান করে পড়ে থাক

মিলিয়ে নে হিসাব

স্বপ্ন আর জাগরণের

তুই আজ ঘুমের ভান করে পড়ে থাক

দেখ কিভাবে

সুস্থ হয়ে ওঠে ফুলের বাগান।

 

৪.

ঘুমের ভেতরে

স্বপ্নের ভেতরে

ইল্যুশনের বাজারে

রাত থেকে ভাতে

জল থেকে উঠে আসুক দস্যু

 

 

ঘটনা


 

১.

আমাদের ভালোবাসার দিন আর মৃত্যুদিন এক হতে পারে না-

দূর রাস্তায় ভিড় করা তারিখহীন আত্ববিলোপ

বিশুদ্ধ তারার মতো কচুপাতায় জলের টালমাটাল আশ্চর্য

এক হতে পারে না

হাতে লেগে থাকা ঔষধের গন্ধ

আমাদের ভালোবাসার দিন ও মৃত্যুদিন এক হতে পারে না

 

২.

তার সরল দৃষ্টি, আর সাদা দাঁতের বিলাসিতা

পাহাড় ভালোবেসে পাহাড়ের নীচে সবুজ জলাভূমি,

হলুদ প্রজাপতি আর মেলায় বিষণ্ন বেলুনের দোলাচল

তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতে পারে না

সব ঘুমের জেগে ওঠা এক নয়

অথচ চোখের পাতা বুজে নিলেই ঘুম হয়ে যেতে পারে

একটি তুচ্ছ ঘটনা

ঠিক যেনো তার জানা আর অজানার মধ্যেকার

বিস্তৃত তীব্র আবহাওয়া!

Related posts