বাদল ধারা’র দু’খানা অণুগল্প
আমতত্ত্ব
আজ ভোর থেকে রবীন্দ্রনাথ আমার ভেতরে গুনগুন করে গাইছে,
তাঁর হাত ধরে আমার ঘুরতে ভালো লাগে, কিছু কিছু নিঃসঙ্গ প্রহরে
রবীন্দ্রনাথ আমার সঙ্গী হয়, আমার সংগীত হয়,
হঠাৎ করে শেষের কবিতার কথা মনে পড়লো
মলাট ফুঁড়ে হাত নাড়ালো অমিত,
অমিত বললো, “যে পক্ষের দখলে শিকল আছে সে শিকল দিয়েই পাখিকে বাঁধে,
অর্থাৎ জোর দিয়ে। শিকল নেই যার সে বাঁধে আফিম খাইয়ে, অর্থাৎ মায়া দিয়ে।
শিকলওয়ালা বাঁধে বটে কিন্তু ভোলায় না, আফিমওয়ালী বাঁধেও বটে ভোলায়ও।
মেয়েদের কৌটো আফিমে ভরা, প্রকৃতি-শয়তানী তার যোগান দেয়।”
আমি মুচকি হেসে অমিতকে ফজলি আম খেতে দিই,
অমিত ফজলি আম খেতে খেতে বললো,
“কবিমাত্রের উচিত পাঁচ বছর মেয়াদে কবিত্ব করা; পঁচিশ থেকে ত্রিশ পর্যন্ত।
এ কথা বলব না যে পরবর্তীদের কাছ থেকে আরো ভালো কিছু চাই, বলব অন্য কিছু চাই।
ফজলি আম ফুরোলে বলব না, আনো ফজলিতর আম;
বলব, নতুন বাজার থেকে বড়ো দেখে আতা নিয়ে এসো তো হে।
ডাব-নারকেলের মেয়াদ অল্প, সে রসের মেয়াদ;
ঝুনো নারকেলের মেয়াদ বেশি, সে শাঁসের মেয়াদ।
কবিরা হল ক্ষণজীবী,…”
এই আমতত্ব আমার কবিতার বাক পরিবর্তন করে দিয়েছিলো
আজ থেকে প্রায় দেড় দশক আগে,
আমি টসটসে আম খাই আর ভাবি,
যা হয়েছে তা তো হয়েছেই এখন নতুন ফল নতুন শস্যের আবাদ করার সময়,
যা ছিলোনা পূর্বে এবং পরে, যা আছে শুধু ভবিষ্যতে
এবং ভবিষ্যৎ থেকে নিয়ে আসতে হবে ফল ও শস্যের বীজ,
আকাশে চাঁদ উঠেছে, ভরা পূর্ণিমা, আমি ও রবীন্দ্রনাথ পাশাপাশি হাঁটছি,
হাঁটতে হাঁটতে অন্য কোনো গ্রহে, এই জ্যোৎস্নার রঙ অতি উজ্জ্বল,
দূরের ছায়াপথ থেকে ভেসে আসছে সুর,
~
মারী আক্রান্ত পৃথিবীতে
দরজার ওপারে রোদ কিংবা জ্যোৎস্না আমার দেখার অধিকার নেই,
আজ সাত দিন হলো নাকে কোনো ঘ্রাণ পাচ্ছি না, জিহ্বায় কোনো স্বাদ নেই,
সকলে চলে গেছে আমাকে ফেলে, এই অন্ধ পরিত্যক্ত গুমোট ঠাসা ঘরে,
আমি একা একা, ভাবি ~ দূর অতীত ও ভবিষ্যত,
বাহিরে কারা যেনো ঘুরাঘুরি করছে আর বলছে
এই বাড়ি এই বাড়ি, পাপের ফল !
তীব্র ক্ষুধার্ত ও পিপাসিত খাবার শেষ কত দিন হবে,
বাহিরে কোনো সারা শব্দ নেই, আমি কী মারা গিয়েছি নাকি বাহিরে সকলে মৃত,