কবিতা 

রিচার্ড সিকেন এর “স্ট্র হাউস, স্ট্র ডগ”

খড়ের ঘর, খড়ের কুকুর

অনুবাদঃ জয়ন্ত বিশ্বাস

(১)

টিভি দেখায় মগ্ন ছিলাম। বারে বসে দু’ঢোঁক কোক গিলে ফেললাম। নিরবচ্ছিন্ন চার-চারটা স্বপ্ন দেখলাম। সেখানে তুমি জ্বলছিলে; তুমি জ্বলতে যাচ্ছিলে; এখনও তোমার শরীর ঘিরে রেখেছে আগুনের শিখা।

টিভি দেখায় মগ্ন ছিলাম। চারটা কোক গিলে ফেললাম। নিরবচ্ছিন্ন চার-চারটা স্বপ্ন দেখলাম।

 

খড়ের ঘরে বসে তুমি তোমার খড়ের কুকুরটাকে খাইয়ে দিচ্ছিলে। বস্তুত তুমি ভুল ঘরে ছিলে; ভুল কুকুরকে খাইয়ে দিচ্ছিলে। আমি বরফ মিশিয়ে কোক গিলে ফেললাম। টিভিতে চার-চারটা স্বপ্ন দেখলাম। তোমার হাসি শীতল, বড় শীতল। তুমি পুড়ে ছারখার হয়ে গেলে; তুমি পুড়ে ছারখার হতে যাচ্ছিলে; এখনও তোমার শরীর ঘিরে রেখেছে আগুনের শিখা।

আবার খড়ের ঘরে বসে তুমি তোমার খড়ের কুকুরটার মুখে বরফ গুঁজে দিলে। তোমার মনে হল- একটা অ্যাডভেঞ্চার হলে মন্দ হয় না। আমি বললাম – তবে তাই হোক। খড়গুলো দাউদাউ করে জ্বলছিল; খড়গুলো দাউদাউ করে জ্বলতে যাচ্ছিল। টিভির ভিতরেও তুমি; বলছো – আমাকে দেখো, একবার আমাকে দেখো!

 

(২)

নিরবচ্ছিন্ন চারটা স্বপ্ন; নিরবচ্ছিন্ন চারটা স্বপ্ন; নিরবচ্ছিন্ন চারটা স্বপ্ন- সেখানে আছড়ে পড়েছে। সেখানে আমার শরীরটাও ছেড়ে দিতে সাধ হল। আমি পরিষ্কারভাবেই জানতাম – এখানে আমাকে ধরার জন্য তুমি নেই।

তুমি মরে গিয়েছো! আমি গ্লাস মনে করে বিচূর্ণ বরফ গিলে ফেললাম; আর তুমি মরে গিয়েছো। ছাই থেকে ছাই।

 

তুমি চেয়েছিলে – তোমার শবদাহ হোক। তাই আমরা তোমাকে পুড়িয়ে দিলাম। তুমি একটা অ্যাডভেঞ্চারে যেতে চাইলে। আমি ছুট দিলাম; পরিষ্কারভাবেই জানতাম- তুমি আর আমাকে ধরতে পারবে না।

তুমি একটা ব্যাধির মত, প্রদাহের মত; অবশ্য এটাকে শরীরে বয়ে নিয়ে বেঁচে থাকার কৌশল আয়ত্ব করে ফেলেছি। যা কিছু ঘটছে- একটা লম্বা, খুব লম্বা টানেলের ভুল প্রান্তে।

 

(৩)

সকালবেলায় জেগে উঠলাম। আমি কিছুই চাই নি; কিছুই করতে চাই নি; বস্তুত আমি কিছুই করতে পারি নি।

শুয়ে শুয়ে আমার নিজের শরীরের গভীরে বহমান রক্তের শব্দ শুনলাম। এর কোন অর্থ খুঁজে পেলাম না; কিচ্ছু না!

আমি না পারছি খেতে; না পারছি স্থির হয়ে বসে থাকতে; না পারছি হাতের কাজে মন দিতে। আমি জেগে উঠলাম- জেগে উঠলাম। এখনও তুমি মরে পড়ে আছো; টেবিলের নিচে পড়ে আছো। এখনও তুমি ওই শালার কুকুরটাকেই খাইয়ে দিচ্ছো; রুমটাকে কেটে দুই ভাগ করে ফেলছো। যা মন চায় করো। কুকুরটাকে খাইয়ে দাও।

খড়ের ঘরটাতে আগুন জ্বালিয়ে দাও!

 

(৪)

মরে গিয়েছো- এজন্য আমি তোমাকে দোষ দিই না, সত্যিই। কিন্তু তোমার সোয়েটারটা আর ফেরত পাচ্ছো না। আমি বললাম – আমাদের মরা মানুষগুলোকে তো আমরা পেয়েই গিয়েছি। এদের নিয়ে এখন করবোটা কী?

 

একটা কালো কুকুর, নাকি একটা সাদা কুকুর? নির্ভর করে কোন কুকুরটাকে তুমি খাইয়ে দেবে, তার উপর। নির্ভর করে কোন কুকুরটার সাথে তুমি বাস করো, তার উপর।

 

(৫)

তাহলে মোদ্দা ব্যাপারটা দাঁড়ালো এই-

আমরা বসবাস করছি একটা ভুল টানেলে। জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাও! কিন্তু এত ঠাণ্ডা কেন? আমার শরীরে তো জামাকাপড় রয়েছে ঠিকই। বৃষ্টি নামলো। বৃষ্টি নামার তো কথা ছিল না! ওখানে বরফ-

টিভিতে; নিসর্গ বরফে ঢাকা। আগুনরঙা আকাশ থেকে চুঁইয়ে নামছে তুষার। আকাশ তো নীল। মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ; অনেক ধন্যবাদ।

তুমি বললে- এবার ঘুমাও।

এবার ঘুমাতে পারো – তুমি বললে।

আমি স্বপ্নের ভিতরে দেখলাম- তুমি কথা বলে উঠলে। বলার জন্য আবারও ধন্যবাদ।

কিন্তু তোমার কোন কথা বলবার তো কথা ছিল না!

 

মূলঃ স্ট্র হাউজ, স্ট্র ডগ – রিচার্ড সিকেন (‘Straw House, Straw Dog’ by Richard Siken)

 

 

Related posts