নিখিল নওশাদের ৫টি কবিতা
একখান কাঁঠালচুরি গ্রাম
এ রাষ্ট্র আমার। আদিবৃক্ষের দাগ লাগা বুকে এখনো সিঁধেলচোর থ্রিল, ‘কান্ধার’ বিল থেকে ছুটে আসে তাম্বুলখানা; কৈশোরের কোন্ কোণে এখনো প্রেমের ছবি, কাব্য-জসীম।
এদেহ জোনাকসম জ্বলে, পুরনো আড়ার তলে নানীদের কঙ্কাল নেচে নেচে ঘুমিয়ে জাগায় সেই সুর…
আবেশে এসে শেষে বিপরীত বাংকারে শিশির-শরীর ধরে জমে যায় সুনিপুণ ট্যুর, বেহেস্তি ঘাম! যে কাম নিশি তোলে ধানের আওয়াজ বাজে শেষরাতে মিটিমিটি শিখা দেয় বধূর বিষম ঢেউ-দিল্। প্রতিটি মধ্যরাতে প্রিয়জন কেঁদে ওঠে বিদেহী বাতায় বসে বিল, ‘কান্ধার বিল’…
যে গাছে বাদুড় ওড়ে পৃথিবীর ফলাফল সেই দিকে হেলে গেলে ছয় পায়ে পিল! এই দেশে নায়ক যে, সেই বেশি বেদনায় নীল। কুহেলি-কলার ভাপে বেড়ে ওঠে বেণীবাঁধা ফুল।
“পেপারে ছাপায়ে দিস, আমি ম’লে” –বলে গেছে বেদে এবাদুল।
পুকুরে প্রতাপ তার এখনো ডুবে মরা খরা নাই নামকরা ‘দহ’ রচে রাতের পুতুল। স্বজনী তামাক রচে, স্বজনা আগুন জ্বেলে জুঝে নেয় ষোলোআনা পিরিতীর উসুল!
এ রাষ্ট্র আমার। অপভ্রংশ দিই, কবি তাই অভিনেতা ক্ষ্যাপাটে ত্রিশূল। কি প্রেম, অত্যাচার; স্বভাষায় শূলে দিই রিভোল্ট বিষে ভরা ‘প্রেমার্ত’ হুল।
♣
গেলে
গেলে; ধুম্র টেনে ব্রেনের হলো ক্ষয়
কয়েল জ্বালি কাগজ-ভাঁজে ইস্ট্যানেতে নয়।
ফারেনহাইট লাগিয়ে রাখি দেহে
যুদ্ধ বাঁধে শর্করা আর স্নেহে!
গাছ কাটছে কেউ
পৃথক গাছে শিকড় কাঁদে, সেও
পেতেছিলো মনের মতো বিষ
কাঠুরিয়ায় কাটতো যদি, ইস!
কেউ নেবে না নীল বদনের আমি
ট্রেন চলে এক, সীমানাহীনগামী…
গেলে; ধুম্র কাঁদে মগজের সেলে-সেলে…
এই বদ্বীপের ব দিয়ে তাই লেখা
বশিরহাটে ইচ্ছেমতী শেখা!
সংকোচনে বলছে বহুব্রীহি
প্রসারণের দানারা খুব মিহি
এই নিয়মে বায়ুর গায়ে-গায়ে
ভাষার ব্যথা ছুটছে তাহার পায়ে।
সে চলেছে ছুটির বোঝা টেনে
শিমুলতলে তুলোর বিচি বুনে।
যে বেদনা ভাসায় ফেরত খাম
তাকেই দিলাম প্রেমিক শিরোনাম।
পেয়ার-গুণে বিষাক্ত সীল দিল্-এ
গেলে; ছায়াপথের সুরতহালে ঢেলে…
♣
পিতা-পুত্রে
“পড়ো। এই উপদেশ ছাড়া কোন কিছু নেই ব্যাটা আর।”
ঘোড়া ছিলো। বেচে দিলে। হাতে রেখে চাবুকের ধার।
পড়ারা আমায় পড়ে, আমিই পাঠ্য যেন তার!
“কি করে খাবি রে শেষে? শিখে নে তিনে-তিনে ছয়।”
তোমার মুখ থেকে, মালিবাড়ি ছোটে ঘরময়। হোমিওপ্যাথির মতো দমকারা গন্ধের ভাড়ে, তুমিই রুয়েছো দেখো “ভবঘুরে” এই সংসারে!
“আমার পিতার ছিলো। খরচে খলিফাসম আমি। তোর পিতা পথভোলা, এখন ক্লান্তি তার, ছেড়ে গেছে সব মাতলামি।”
এই যে দিলাম কথা, হাতে কিছু ক্ষত পেলে, বিক্ষত হাত ধরে, ট্রেন নেবো মালিবাড়িগামী…
আমার পিতার থাক, পবিত্র এই পাগলামি।
♣
আর মার্কেটও
কখনো গাঁজা খেলে মনে হয় চিনে গেছি সবকিছু। অচিন ঘাতকের ঘটিয়েছি ব্যবচ্ছেদ। অলিন্দের আলনায় এতোই ছকে ছকে বিছিয়ে রেখেছিলো আমারই হন্তারক– সে হত্যার নিখুঁত ব্যকরণ এবং সেই ক্রমানুসারে আমার আয়ু ক্ষয়ের বর্ণমালা-সব! ফলে বুঝে গেছি, আমাকে নিয়েছিলে তুমি মাতৃ-পাখির মতো বুকে। চিরপ্রথম অর্গাজমের স্বাদে ছিঁড়ে-কেটে উড়েছিলো শিল্পের কলা…
মেঘের দুল নিয়ে, বহুৎ বৃষ্টি ও বাদলের অত্যাচারে ‘পঁচনোন্মুখ’ জমাট খড়ের ওপার থেকে দেখার আকাশ– আক্ষরিকে আশ্রয় দিতো আহা; আশরীর…
পরে মনে হয় চিনিনি কিছুই। আসলে, ছানা-জন্মানো উত্তাপে আবেশিত পাখির চোখের মতো ঘোরলাগা দৃষ্টিতে দেখেছি তোমায়, প্রিয় খুনি…
আবহাওয়া এতোই অসুস্থ যে, নানাবিধ মেডিকেল আর স্বাক্ষরিত সাইন্সে প্রমাণিত দুঃখগুলোকেই দারুণ সুখ মনে করার অসুখ হয়েছে মানুষের। কোনো নিরীহ পুলিশের বউ, সেকালে এক পাহাড়ের মতো উঁচু ও একই সাথে ভীষণ ভারি স্বপ্নের পৃথিবী কিনে ফেলেছিলো তার জ্বালানিয়া যৌতুকে। তারপর থেকে, শহরের সকল মটরযান হারিয়ে ফেলেছে লাইসেন্স…
দেরি হয় খালি। বুকে ধীরে বসে গেছে কেনাবেচা হাট বাজার
আর মার্কেটও…
♣
জ্যামিতি
তোমারে চিনেছি তাই নৃত্য। কিনেছি, এমন ঘোর-এ বৃত্ত! তেমন জ্বরের সখা কেন্দ্র। পরের ক্যাসেটে মানবেন্দ্র…
কাঁদছে পরিধি ঘিরে মন্দ। অভ্যাসের এ তীরে বন্ধ… ব্যাসার্ধে বিষ জ্বালা; ছেঁড়া প্রাণ। ‘বর্গীয় জ্যা’ জ্বালে’ ধূপ-ঘ্রাণ…
অসংখ্য মৃত্যুর মরমী…
ক্র্যাক ছেলে একদিন ডাকবে। বিষণ্ন পড়ুয়া তরুণীর, খাতায় দাগানো এক থাকবে–
ভূমিহীন জ্যা শুধু পৃষ্ঠায়
মিতি পুড়ে দিতে কারো তেষ্টায়…