আবার গুণকীর্তনের পালা : কোয়ালিটির প্রায়োরিটি ।। কলিম খান (প্রথম পর্ব)
‘নাম’ (কোড্) মাহাত্ম্য বর্ণণ:
‘ঋগবেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, চতুর্থত অথর্ববেদ, পঞ্চমত ইতিহাস পুরাণ, ব্যাকরণ, শ্রাদ্ধতত্ত্ব, গণিতবিদ্যা, দৈব-উৎপাত বিষয়ক বিদ্যা, কালবিদ্য, বাক্যোবাক্য, নীতিশাস্ত্র, নিরুক্ত, ব্রহ্মবিদ্যা, ভূতবিদ্যা, ক্ষত্রবিদ্যা, নক্ষত্রবিদ্যা, সর্প ও দেবজন বিদ্যা… এসবই নাম। নামের উপাসনা কর। যিনি নামকে ব্রহ্মরূপে উপাসনা করেন- নামের গতি যতদূর, ততদূর তিনি ইচ্ছানুযায়ী যাইতে পারেন।’ (ছান্দ্যোগ্য উপনিষদ ৫২০: ৪,৫)
‘…গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।’ -(সুকুমার রায়)
সৈয়দ মুজতবা আলী আলি একবার কয়েক বছরের জন্য আরব দেশে গিয়েছিলেন, অধ্যাপকের চাকরি নিয়ে। থাকতেন সেখানকার একটি শহরে, এক আরবদেশীয় ভৃত্য রহমান-এর তত্ত্বাবধানে। আলিসাহেবের ভাষ্য অনুসারে, রহমান তাঁর হয়ে ‘ফ্রম সুমেন্ডিং টুখুনখারাবি’ অর্থাৎ ‘জুতো সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ’ পর্যন্ত সব কাজ কর দেবার দায়িত্বে ছিল। শহরের লোকেরা স্বভাবতই আলিসাহেবকে ‘আলিসাহেব’ হিসেবে চিনত না, চিনত ‘রহমানের সাহেব’ হিসেবে। প্রভরু ‘অভিজ্ঞান’-রূপে ভৃত্যের এই ভূমিকা দেখে আলি সাহেবের মনে একটু দাগা লেগেছিল। হাজার হোক, গোঁফটাতো আলিসাহেবেরই। অথচ লোকে কিনা বলবে গোঁফের আলিসাহেব! গোঁফের মাধ্যমে গোঁফধারীকে চেনা? গোঁফের স্বভাবচরিত্তির দিয়ে গোটা মানুষটার বিচার! দাগা তো লাগবেই।
তবে শহরের লোকেদেরই বা দোষ কী! তাদের তো ধরবার একটা জায়গা চাই। যার গোঁফ নেই, লেজ নেই, সিং নেই, কান নেই; তাকে ধরে, তো ধরে কোথায়? কেননা, যার বাইরে কিছুএকটা ‘বিশেষ’ হয়ে বেরিয়ে নেই, তাকে ধরা তো এক মুশকিলের কাজ। যেকারণে ‘ডিম’ নিয়ে গাঁয়ের মা-ঠাকুরমারা আজও সুলু কাটেন- ‘ঝুঁটি নেই তার ধরব কী, ল্যাজ নাই তার করব কী?’ ঠাকুমারা সুতরাং, ধরার মতো একটা কিছুতো পেতে হতই; তা সেটা তার গোঁফ হোক আর লেজই হোক।
মোট কথা, আমাদের একটা ধরতাই দরকার। জগতের প্রত্যেকটা বস্তুকেই আমরা ধরি তার একটা ‘ধরতাই’ দিয়ে, কিংবা বলতে পারেন সেই বস্তুটির গোঁফ দিয়ে বা ঝুঁটি দিয়ে।আমাদের জগৎ-ভাবনার সমস্ত কাজটাই চালাতে হয়, বলতে গেলে, জগতের বিষয় ও বস্তুসমূহের গোঁফ ধরে ধরে। মানবসভ্যতার সূত্রপাতই হয়েছে জগতের সবকিছুকে তাদের গোঁফ বা ঝুঁটি ধরে ধরে চিনতে শেখার পর। তাই, জগৎকে চিনি মানে আসলে জগতের গোঁফটাকে চিনি। তার মানে, রহমানের মাধ্যমে শহরবাসীরা আলিসাহেবকে যতটা চিনত জানত, জগতের গোঁফের মাধ্যমে আমরাও জগতকে ঠিক ততটাই চিনি জানি। জগতের ওই গোঁফটাকেই প্রাচীন ভারতীয়রা প্রথমে বলতেন সংজ্ঞা এবং পরে বলতেন ‘নাম’, আর ‘আধুনিক’ পন্ডিতেরা বলে ‘প্রতীক। ইংরেজিতে একেই বলে ‘সিমবল’। মর্ডান যুগের শেষে সেই ‘সিম্বল’ গিয়ে হাজির হয় ‘ব্রান্ড নেম’-এ। আজকের পোস্টমডার্ন যুগে সেটাই এসে ঠেকেছ ‘অ্যাস্কি’ (ASCII = American Standard Code of Information Interchange) কোড-এ। এটিকে আপনি ‘ঝুঁটির ঝুঁটি তস্য ঝুঁটি’ও বলতে পারেন।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বাঘ’ বললে যদি গোটা বাঘটা এসে হাজির হত, তাহলে সেটা বক্তা ও শ্রোতা কারও পক্ষেই সুখকর হত না। বাঁচোয়া এই যে ‘বাঘ’ শব্দটা প্রকৃত বাঘ নয়, প্রকৃত বাঘের প্রতীক বা নামমাত্র। বাঘ-বিষয়ক আলোচনাটা আমরা প্রকৃতবাঘকে হাজির করে চালাই না, তার ওই শব্দপ্রতীক বা নামশব্দটার সাহায্যেই চালাই। যেমন ‘জল’ বোঝাতে আমরা শ্রোতার গায়ে এক বালতি জল ঢেলেই দিই না, ‘জল’ শব্দটি উচ্চারণ করি; শ্রোতাও বুঝে যায় কার কথা বলা হচ্ছে। তার মানে জাগতিক জলের গোঁফ বা ঝুঁটি বা নাম বা প্রতীক হল- ‘জল’ শব্দটি। বিজ্ঞানীরা সেই জাগতি জলকেই বোঝান H2O দিয়ে। তাই বিজ্ঞানীদের কাছে জাগতিক জলের গোঁফ বা প্রতীক বা নাম হল H2O এভাবেই বিশ্বজগতের লক্ষকোটি বিষয় ও বস্তুকে বুঝতে-বোঝাতে লক্ষকোটি নাম বা প্রতীক ব্যবহার করা হয়। নানা শ্রেণীর মানুষেরা নানাভাবে সেই নামকরণ করেন। একাজে ভাষাবিজ্ঞানীরা (ভাষাজীবেরা) যেমন ব্যবহার করেন ‘নামশব্দ’ বা ‘শব্দপ্রতীক’ (অর্থাৎ লিঙ্গুইস্টিক সিমবল) তেমনি পদার্থবিজ্ঞানীরা ব্যবহার করে ‘নামসংখ্যা’ বা ‘সংখ্যাপ্রতীক’ (অর্থাৎ ম্যাথমেটিক্যাল সিমবল), নৃত্যবিজ্ঞানীরা (নৃত্যশিল্পীরা) ব্যবহার করেন ‘নামমুদ্রা’ বা ‘নৃত্যপ্রতীক’ (অর্থাৎ কোরিওগ্রাফি সিমবল), চিত্রবিজ্ঞানীরা (চিত্রশিল্পীরা) ব্যবহার করেন ‘নামচিত্র’ বা ‘চিত্রপ্রতীক’ (ভিজয়ুাল সিমবল)… আর বোবারা ব্যবহার করেন ‘নামদেহ’ বা ‘দেহপ্রতীক’ (অর্থা সেমিওলজিক্যাল সিমবল)। সর্বোপরি, সামাজিক ও ধর্মীয় নাম বা প্রতীকসমূহ (সোসিয়োলজিক্যাল ও রিলিজিয়াস সিম্বল) তো রয়েছেই। বলতে গেলে, মানুষের সার্বিক জ্ঞানরাজ্য হল আসলে ওই সকল ঝুঁটির বা নামের বা প্রতীকের মহারণ্য।
মানবসমাজে ক্ষমতার আবির্ভাবের পর, সেই মহারণ্যে শুরু হল শ্বাপদের ঘোরাঘুরি। কিছু মানুষের ‘নাম-ভাঁড়ানো’র খেলা আর অন্য কিছু মানুষের মরণফাঁদ। আদিমসমাজ যে সকল আচার নিষেধ করে (বা ‘অলম্ কার’ করে) রেখেছিল, শুরু হল সেই অলঙ্কারের ব্যবহার। নাম বা প্রতীককে ‘বিলক্ষণ’ বা বিপরীত লক্ষণযুক্ত করে সব কিছুকে সাধারণের কাজে ‘গহন, গুহ, গহনা’ করে দেওয়া হল; পথ খোলা থাকল কেবল ‘গুহাচারী’ আলঙ্কারিকদের জন্যে। গড়ে উঠল বিশাল ‘অলঙ্কার শাস্ত্র’। নাম বা প্রতীকের উপর অলঙ্কার ও অর্থালঙ্কারের ওইসকল ফাঁদে, অতএব, কারও জন্য বরাদ্দ হল পৌষ মাস, কারও বা সর্বনাশ। ক্রমে সেই ছদ্মবেশী নাম বা প্রতীকেরা বহু পথঘাট পেরিয়ে কেউ কেউ গিয়ে উত্তীর্ণ হল ব্রান্ডে এবং সেখান থেকে হাজির হয়েছে আজকের মেসিন-কোডে। মেসিন কোডের কমপিউটার সফটওয়্যারগুলিই এখন জগতের ঝুঁটি ধরে রেখেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল : নাম থাকলেই যখন নাম-ভাঁড়ানোর খেলাও থাকবে, ঠকে যাওয়ার বিপদও থাকবে; তখন জাগতিক কাজ কারবারের খেলায় চর্চা বা আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা জাগতিক বিষয় ও বস্তুগুলিকে বাদ দিয়ে, তাদের ওই সকল সন্দেহজনক নাম বা প্রতীকগুলিকে নিয়ে কাজ চালাতে যাই কেন? কিংবা বলা ভালো, জগৎকে বাদ দিয়ে মানুষ জগতের গোঁফ বা ঝুঁটি ধরে ধরে কাজ চালাতে গেল কেন?
সম্প্রতি ভারত সরকার পাঁচখানি পরমাণুবোমা পর পর পরীক্ষা করে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, আর এরকম পরীক্ষা তাঁরা করবেন না। প্রায় একইরকম ঘোষণা করেছিল আমেরিকা হাতেনাতে ১৩০০ পরীক্ষা করার পর, রাশিয়া একই ঘোষণা করেছিল প্রায় ৯০০ বোমা পরীক্ষার পর। ফ্রান্স ইংলন্ড চীন প্রভৃতি দেশগুলিও অনেক পরীক্ষার পর একইরকম ঘোষণা করেছিল। এর কারণ হল, ওই দেশগুলি তাদের ঐসকল পরীক্ষার পর, পারমাণবিক বোমা নিয়ে ‘সিমুলেশন’ করবার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছিল। আর, ভারত সবেমাত্র সেই যোগ্যতা অর্জন করেছে। এরপর থেকে ভারতেরও আর বাস্তবে বোমা ফাটিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার দরকার নেই। নানা রকমের বিভিন্ন ধরনের বোমা বানিয়ে ফাটালে তার কী ফল হবে, সেটা কম্পিউটারেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে নেওয়া সম্ভব। সংক্ষেপে একেই বলে ‘সিমুলেশন’। ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’-এর হাত থেকে এই সিমুলেশন পরমাণুবাজদের মুক্তি দিয়েছে।
জগৎভাবনার ক্ষেত্রে মানুষ সেই কাজটাই করে আসছে বহু প্রাচীন কাল থেকে। সব জিনিসকেই বাস্তবে মিশিয়ে (কচু+আলু+আদা=) কচুল্যাদা করেই দেখতে হবে, এই বোকামি থেকে মানুষ বহু আগেই মুক্ত। ‘বাঘে ছাগে মিল হলে’ কী হবে, সেটা মাথার ভিতরে সিমুলেশন করে দেখে নিতে পারে। চারটা আম আর পাঁচটা লেবু মেলালে যে ন’টা ফল হবে, সেটা বোঝার জন্য তাকে চারটা আম আর পাঁচটা লেবু একত্রে ঢেলে মিলিয়ে গুনে দেখতে হয় না, মাথার ভেতরে সিমুলেশন করেই সেটা টের পেয়ে যায়। অর্থাৎ জগতের বিষয় ও বস্তুসমূহকে নিয়ে কাজ চালাতে গেলে, হাতে নাতে কাজে লাগার আগেই মানষু তার মাথার মধ্যে সিমুলেশন করে দেখে নেয়, কী থেকে কী হতে পারে। অন্যথায় তাকে ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’-এর ঝুঁকি নিতে হত সব ক্ষেত্রেই। তাই, একান্ত প্রয়োজনেই মানুষ জগৎকে বাদ দিয়ে জগতের নামাবলীর মাধ্যমে জগতের ঝুঁটি ধরে ধরে কাজ চালাতে বাধ্য হয়েছিল, বাধ্য হয়। তাই, নাম বা প্রতীক না-হলে মানুষের চলে না। একালের পোস্টমডার্ন ভাষায় বললে, নাম-এর উপাসনা আমাদেরকে ‘ভারচুয়াল রিয়ালিটির’ শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়; যার পর থেকে রিয়ালিটির সূত্রপাত। অর্থাৎ মোক্ষের নিশ্চয়তাদান পর্যন্ত নামের গতি; মোক্ষ পর্যন্ত নয়।
যতদূর বোঝা যায়, মানবসমাজ জগতের ঝুঁটি ধরার সূত্রপাত করেছিল নাম বা প্রতীক দিয়ে নয়, ‘সংজ্ঞা’ দিয়ে। শুরুতে ‘জনন বিষয়ক ধারণা’ বা ‘জ্ঞান’-এর সাহায্যে গড়ে উঠেছিল মানবসভ্যতার আদি থিংক ট্যাঙ্ক বা ‘মানস সরোবর’, যাকে বিশ্বজগতের আদি ঝুঁটি বলা চলে। অতঃপর, ইতিমধ্যে উদ্ভুত কর্মজগতের দ্বিচারিতা থেকে, জগতের ঝুঁটি ধরবার পদ্ধতিটি দুরকম হয়ে যায়, গুণের ঝুঁটি ধরা ও রূপের ঝুঁটি ধরা। সেখান থেকেই চিন্তার ‘ক্রিয়ামূলক-ধারা’ ও ‘ক্রিয়াকারীমূলক-ধারা’- এই দুইটি ধারা উদ্ভুত হয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এই ধারা দুটিকেই যথাক্রমে সংজ্ঞাবাদী ধারা ও নামবাদী ধারা, ব্রহ্মপুত্র ধারা ও সিন্ধুধারা,১ ভাববাদী ধারা ও বস্তুবাদী ধারা বলে।… কালগুণে, বস্তুবাদী ধারার কদর বেড়ে যাওয়ায় ‘সংজ্ঞা’সমূহও ক্রমশ ‘অভিধা’ পেরিয়ে ‘নাম’-এ পরিণত হয়; শুরু হয়ে যায় ‘নাম-ভাঁড়ানোর’ আলঙ্কারিক খেলা (কীভাবে, সেকথায় আমরা পরে আসছি)। অশোকের রাজত্বকাল থেকে ‘নাম’-এর কদর আরও বাড়তে থাকে এবং (ভারতে) কলি (যন্ত্র) যুগের সূত্রপাত হয় ও ‘নাম’-সংকীর্তনের পালা শুরু হয়ে যায়; মোগলযুগ ব্রিটিশযুগ পেরিয়ে যা আজও অব্যাহত ভাবে চলছে।
পাশ্চাত্যে, ‘নাম’-এর সেই কদর বৃদ্ধি চুড়ান্তে পৌঁছায় ফ্রান্সে ‘সিম্বলিস্ট’ আন্দোলনের মাধ্যমে এবং তাঁদের নাম-ভাঁড়ানোর আলঙ্কারিক খেলা তুঙ্গে ওঠে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত ধরে সেই আন্দোলনের ছায়া ভারতে পৌঁছলে, আমাদের ব্রিটিশপালিত ‘আধুনিক’ বাঙালি পণ্ডিতেরা ‘সিম্বল’-এর বাংলা অনুবাদ করেন ‘প্রতীক’ শব্দ দিয়ে। ফলে বাঙালি তার নিজস্ব ‘নাম’ সংকীর্তনের বহুকালক্রমাগত ধারা থেকে আত্মবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রতীয়মান হয় যে, পাশ্চাত্যের পন্ডিতেরাই কেবল জগতের ঝুঁটি ধরতে শিখেছিলেন ‘সিমবল’-এর সাহায্যে এবং ব্রিটিশ ভারতে এসেছিল বলে তাদের কৃপায় আমরাও জিনিসটা শিখতে জানতে পেরেছি, পারছি;কারণ ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা গাধা ছিলেন’২। যাইহোক, বাঁচতে গেলে জগতের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপন না করে তো উপায় নেই, আর সেটার জন্য সিমুলেশন আবশ্যিক এবং তার জন্য জগতের ঝুঁটি ধরতেই হবে। পৃথিবীতে এমন কোনও জাতি নেই, যারা এই কাজটা না করেই সভ্যযুগে উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। আদিতে সেই কাজটার সূত্রপাত হয়েছিল জগতের গুণের ঝুঁটি ধরে ধরে; সে ছিল ব্রহ্মপুত্র ধারা। পরে পৃথিবীর সব সভ্যতাই জগতের রূপের ঝুঁটি ধরে ধরে কাজ চালাতে শিখে যায়; সিন্ধুধারার বাড়বাড়ন্তু হয়। এমনকি তথাকথিত ‘রূপবিরোধী’ ইসলামী সভ্যতাও এই অলঙ্ঘনীয় পথই অনসুরণ করেছিল। প্রতেককেই জগতের রূপের ঝুঁটি ধরে সিমুলেশন করে, তারপর হাতেনাতে বাস্তবে প্রয়োগ করা শুরু করেছিল। যে যুগে যে জাতি সবচেয়ে ভালোভাবে সেটা করতে পেরেছে, মানবসভ্যতার জয়যাত্রার মশালবাহীরূপে সেই জাতিই সেই সেই যুগে সামনের সারিতে উঠে এসেছে।…
সুতরাং, বাঁচতে হলে জগতের সঙ্গে সম্পর্কিত না হয়ে মানুষের উপায় নেই। তার বিষয় ও বস্তুসমূহের ঝুঁটি ধরে ধরে সিমুলেশন করা আবশ্যিক। আর সেটা করতে হলে, প্রতিটি বস্তু ও বিষয়ের নাম বা প্রতীক নির্ণয় করে তার সাহায্যে জগতের ঝুঁটি ধরতে শেখা চাই-ই চাই। প্রশ্ন হল মানুষ সেই যোগ্যতা অর্জন করল কেমন করে? তারপর আবার, জগতের গুণের ঝুঁটি ধরবার অভ্যাস থেকে রূপের ঝুঁটি ধরবার অভ্যাসে উত্তীর্ণ হল কেমন করে? অর্থাৎ নামে বা প্রতীকে উত্তীর্ণ হল কেমন করে?
চলবে—